ঋণে জর্জরিত মুক্তিযোদ্ধা কাটা পড়লেন ট্রেনের নিচে

গাইবান্ধা শহরের অদূরে লোকাল ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে আবদুল কুদ্দুস মিয়া (৮৩) নামের এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাইবান্ধা-বোনারপাড়া রেলপথের স্টেডিয়াম মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আবদুল কুদ্দুসের বাড়ি ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের চণ্ডিয়া গ্রামে। তিনি স্থানীয় হানিফ মিয়াপাড়া জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন।

কুদ্দুসের পরিবারের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন গলা ও পেটে ব্যথাজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ঢাকা, খুলনা ও রংপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েছেন। এ জন্য তিনি দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়ে কোনোমতে তাঁর সংসার চলত। তবে ভাতার টাকার বেশির ভাগই ঋণের মাসিক কিস্তি দিতে চলে যেত। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারতেন না। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন।

আবদুল কুদ্দুসের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে মাইনুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান দিনমজুরের কাজ করেন। একমাত্র মেয়ে কুলসুম বেগমের বিয়ে হয়েছে।

কুদ্দুসের পরিবারের বরাত দিয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী আকবর বলেন, কুদ্দুস মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গতকাল বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে গাইবান্ধা শহরের কলেজপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যান। পরে ওই বাসা থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্টেডিয়াম এলাকাসংলগ্ন রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়েন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এর আগেও তিনি ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তবে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া রেলওয়ে (জিআরপি) পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বলেন, রেললাইন পারাপার হওয়ার সময় সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটগামী লোকাল ১৯ আপ ট্রেনের ধাক্কায় আবদুল কুদ্দুস মারা যান। স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, এটা আত্মহত্যা না দুর্ঘটনা, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় বোনারপাড়া জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।