হাত-পা প্রায় বিকল, তবু থেমে নেই ঈশ্বর

এসএসসি পরীক্ষায় মুখ দিয়ে লিখে চলছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ঈশ্বর কুমার। ছবি: প্রথম আলো
এসএসসি পরীক্ষায় মুখ দিয়ে লিখে চলছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ঈশ্বর কুমার। ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় গত মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষার এইচ টি ইমাম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের একটি কক্ষে মুখ দিয়ে দ্রুত লিখে পরীক্ষা দিচ্ছিল ঈশ্বর কুমার। পরে বিষয়টি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নজরে এলে একজন শ্রুতলেখকের সহায়তায় ঈশ্বর কুমারের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ঈশ্বর কুমার উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মৃত প্রফুল্ল চন্দ্র সূত্রধরের ছেলে। সে উপজেলার আবদুল মজিদ উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। জানা গেল, শারীরিক প্রতিবন্ধী ঈশ্বর চন্দ্র ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারিয়েছে। জন্মের পর থেকে তার হাত দুটো অবশ। পা দুটিতেও শক্তি কম। কোনোরকমে আস্তে আস্তে হাঁটতে পারে সে। মুখ দিয়ে লিখে সে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। হাতে শক্তি না থাকায় একা একা খাতা ঠিক করে লিখতে পারে না সে। খাতায় লেখার সময় পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তাঁর খাতার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেন।

ঈশ্বর কুমারের বাবার কোনো জায়গাজমি নেই। অন্যের জমিতে ঘর উঠিয়ে বসবাস করত তারা। মা-বাবার মৃত্যুর পর একই গ্রামে বসবাসকারী বোন রিভা রানী সূত্রধর তাকে লালন-পালন করছেন। তারা তিন বোন দুই ভাই। ভাইদের মধ্যে সে সবার ছোট। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু বড় বোনই এখন তাকে মায়ের মতো লালন-পালন করছেন। স্থানীয় মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় অদম্য শক্তি নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে ঈশ্বর কুমার।

ঈশ্বর কুমার জানায়, তার স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ইউসুফ আলী ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তার লেখাপড়ায় নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ঘোষ তাকে বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে সে আইনজীবী হতে চায়।

মুখ দিয়ে কলমের পেছনের অংশ কামড়ে ধরে খাতায় লেখে ঈশ্বর। বেশ দ্রুতই লিখতে পারে সে। এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন সে মুখ দিয়েই পরীক্ষার খাতায় লিখে যাচ্ছিল। বিষয়টি পরীক্ষাকেন্দ্রের সভাপতির নজরে আসে। পরে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পরীক্ষাকেন্দ্রের সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঈশ্বর কুমারের জন্য একজন শ্রুতলেখকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রুতলেখকের সাহায্যে সে বাকি পরীক্ষাগুলো দিতে পারবে।