যমুনার চরাঞ্চলে রেশম চাষ

মরিয়ম বেগমের (৫২) স্বামী মারা গেছেন। তিন সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে–অনাহারে দিন কাটছিল তাঁর। যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার পরিবারটির আয় রোজগারের পথও ছিল না। পরে রেশম উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মরিয়ম বেগম রেশম গুটির চাষ শুরু করেন। এতে তাঁর সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।

মরিয়ম বেগমের মতো সিরাজগঞ্জে যমুনার চরাঞ্চলে শতাধিক পরিবার রেশম গুটির চাষ করছে। এতে তাদের বাড়তি আয় হচ্ছে। বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে রেশম চাষে প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। 

মরিয়ম বেগমের বাড়ি সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের শৈলাবাড়ি গ্রামে। তিনি বলেন, ‘রেশম চাষের আয় দিয়েই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছি। দুজন এমএ এবং একজন বিকম পাস করেছে। বাড়িতে থাকবার ঘরটি ছিল ভাঙাচোরা। সেটিও মেরামত করেছি। পাশেই আরও একটি নতুন ঘর করেছি। নিয়মিত রেশম চাষ করায় বড় ছেলে মুসলিমকে রেশম উন্নয়ন বোর্ড সম্মানিত সদস্য পদ দিয়েছে।’

মরিয়ম বেগম জানান, রেশম গুটি উৎপাদনের জন্য পলু পোকার ডিম বর্তমানে বিনা মূল্যে দিচ্ছে রেশম বোর্ড। প্রতি ১০০ পলু পোকার ডিম শেড তুলতে লাগে ২০-২৫ দিন। খরচ হয় প্রায় হাজার টাকা। আয় হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। বছরে চারবার এই পলু ডিম তুলে রেশম চাষ করা যায়। এসব শেডে পলু পোকার খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় তুঁতগাছের পাতা। পলু ঘর ও শেড দেয় রেশম বোর্ড। তুঁতগাছ লাগানোর জন্য নামমাত্র মূলে চারাও সরবরাহ করে বোর্ড। রেশম চাষ করে চরাঞ্চলে অনেক পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে।

জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে যমুনা চরের বেলে-দোআঁশ মাটিতে তুঁতগাছ রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তখন সিরাজগঞ্জে যমুনার চর ও নদীভাঙনকবলিত এলাকায় রেশম চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ১০২ জন প্রশিক্ষিত নারী-পুরুষ পলু পোকা পালনের মাধ্যমে রেশম চাষ করে সমৃদ্ধি অর্জন করেছেন। ২১৫ জন রেশমচাষি তুঁতগাছ রোপণ করে রেশম চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৫৯টি পলু পালন ঘর বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩০টি ঘর বিতরণের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগে চাষিদের পলু পোকার ১০০ ডিম সংগ্রহ করতে ২০৫ টাকা দিতে হতো। এখন বোর্ডের পক্ষ থেকে এসব ডিম বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। তুঁতগাছও সরবরাহ করে বোর্ড। প্রতিটি তুঁতগাছের ভর্তুকি মূল্য ধরা হচ্ছে ৫০ পয়সা। বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চাষিরা প্রতি কেজি রেশম গুটির দাম পান ৩৫০ টাকা। 

জেলা রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন বলেন, যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকায় তুঁতগাছ ভালো হওয়ায় রেশম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে রেশম বোর্ডের পক্ষ থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জনবলস্বল্পতার কারণে রেশম চাষ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকার সুনজর দিলে রেশম চাষের মাধ্যমেই যমুনা চরে মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব।