পুরানগড়ে শিমের রাজ্য

খেত থেকে শিম তুলে ঝুড়িতে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন এক চাষি। সম্প্রতি সাতকানিয়ার পুরানগড়ের বৈতরণী গ্রামে।  প্রথম আলো
খেত থেকে শিম তুলে ঝুড়িতে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন এক চাষি। সম্প্রতি সাতকানিয়ার পুরানগড়ের বৈতরণী গ্রামে। প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পুরানগড় ইউনিয়নে প্রতিবছর বাড়ছে শিমের চাষ। লাভ থাকায় প্রতিবছর বাড়ছে চাষির সংখ্যা। এই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের অন্তত ১ হাজার ৯০০ জন চাষি শিম চাষের সঙ্গে জড়িত। এ বছর শিমের ফলন ভালো হয়েছে, পাশাপাশি দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই চাষিরা খুব খুশি।

 চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে একসময় আমন ও বোরো মৌসুমে দুই দফায় ধানের চাষ হতো। ধান চাষে ঝুঁকি বেশি থাকায় এবং লাভ কমে যাওয়ায় এলাকার কৃষকেরা শীত মৌসুমে শুধু শিমের চাষই করে চলেছেন। 

তা ছাড়া শিমখেতের একই মাচাঙে গ্রীষ্ম মৌসুমে তাঁরা করলা, কাঁকরোল, শসা, ঝিঙে ও চিচিঙ্গাজাতীয় সবজি চাষ করেন।  

 সম্প্রতি পুরানগড়ের বৈতরণী, ফকিরখীল, কালিনগর, মাঝিরপাড়া, পুরানগড়, বটতলীপাড়া ও নয়াহাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিলজুড়ে শিমের খেত। তা ছাড়া বাড়ির পাশের আঙিনা, সড়কের দুই পাশসহ খালের পাড়েও শিমের খেত রয়েছে। 

কোনো কোনো খেতে শিমগাছের পরিচর্যা করছেন চাষি। আবার শিম তুলছেন চাষিসহ শ্রমিকেরা। বিকেলে নয়াহাট এলাকায় বস্তায় ভরা শিম ওজন মেপে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি চাষিরা পাইকারদের কাছ থেকে টাকা গুনে নিয়ে হাসিমুখে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।

  উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতকানিয়া উপজেলায় এ বছর ৩৬০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। আর শুধু পুরানগড় ইউনিয়নেই চাষ হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১৫০ হেক্টর। গত বছর পুরানগড়ে উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ টন শিম। এ বছর এই ইউনিয়নে শিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯২০ টন। বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

বৈতরণী গ্রামের কৃষক মিলন দাশ গুপ্ত (৪৫) তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে খেত থেকে শিম তুলছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একসময় এলাকার চাষিরা শুধু ধানের চাষ করতেন। ধান চাষে লাভ কম ও ঝুঁকি বেশি থাকায় এলাকার অধিকাংশ চাষিই এখন শিম চাষে নেমে পড়েছেন। শিম চাষ করে এখন পর্যন্ত কোনো চাষিকে ক্ষতির মুখে পড়তে দেখেননি তিনি। তাই এলাকায় প্রতিবছর শিমের চাষ বাড়ছেই।

শিলঘাটা এলাকার কৃষক আবদুল কাদের (৫৮) প্রথম আলোকে বলেন, শিম চাষে প্রতি কানিতে খরচ পড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর শিম বিক্রি করে পাওয়া যায় ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে শিম চাষে লোকসানের আশঙ্কা থাকে না।

পুরানগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়নের অধিকাংশ বাসিন্দার পেশা কৃষি। আর প্রত্যেক গ্রামে এখন কমবেশি শিমের চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এলাকার কৃষদের উৎপাদিত শিম কিনে নিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাসহ পাশের জেলার পাইকারেরা প্রতিদিন বিকেলে পুরানগড়ের নয়াহাট এলাকায় আসেন।

 সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়ন এখন শিমের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। এই ইউনিয়নে প্রতিবছরই শিমের চাষ বাড়ছে।