করোনাভাইরাস নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে অবশেষে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য মিনি থার্মাল স্ক্যানার আনা হয়েছে। মেডিকেল ডেস্কে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে অবশেষে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য মিনি থার্মাল স্ক্যানার আনা হয়েছে। মেডিকেল ডেস্কে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো
>দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। তবে ঝুঁকি আছে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেই প্রশ্ন সর্বত্র। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীনফেরতদের করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করার দাবি উঠেছে।

সরকারের স্বস্তি হচ্ছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। তবে এই ভাইরাস চীনসহ বিভিন্ন দেশে যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে আশঙ্কা বেড়েই চলছে। এ পর্যন্ত চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ জনের লালা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ শনাক্ত হয়নি।

গত ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৯৩ জন চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য আলাদা করে (কোয়ারেন্টাইনে) রাখা হয়েছে। আর ২০ চীনা নাগরিক আছেন পায়রা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে। কিন্তু বাকিদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

অবশ্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের স্বাস্থ্য খাত সজাগ রয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের সব নৌ, স্থল ও বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং মেশিন বসানো হয়েছে। অধিক সতর্কতার জন্য চীনের উহান থেকে বাংলাদেশে আসা চীনা নাগরিকদের অন অ্যারাইভেল ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। উহান থেকে ফেরত ৩১২ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং সরকারিভাবে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

গতকালই জাতীয় সংসদে অভিযোগ ওঠে, বিমানবন্দরে চীনফেরতদের করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গাফিলতি করা হচ্ছে। সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক এই অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করতে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন।

চীনফেরত এক নারী যাত্রীর ফেসবুক লাইভ নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ উদ্ধৃত করে মুজিবুল হক বলেন, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর যাত্রীদের পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। পাঁচ ঘণ্টা পর লিখে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গাফিলতি, অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে কিছু যাত্রী পরীক্ষা ছাড়াই বেরিয়ে গেছেন।

চীন থেকে আসা বাংলাদেশি যাত্রীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই দুর্যোগের সময় চীন থেকে আসা সব ধরনের যাত্রীর ওপর তীক্ষ্ণ নজরদারি করা জরুরি। ৩১২ জনকে ফিরিয়ে এনে সরকার তাঁদের ওপর নজরদারি বজায় রেখে যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে, বাকিদের ক্ষেত্রেও সেটি হওয়া উচিত।

করোনা নিয়ে আতঙ্ক নয়: চীনা রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, চীনের অন্তত আট হাজার নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করছেন। চীনা নববর্ষের ছুটি কাটাতে এঁদের দুই-তৃতীয়াংশ দেশে গেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আপাতত তাঁদের বাংলাদেশে ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশে চীনের অর্থায়নে বৃহদায়তন প্রকল্পসহ নানা প্রকল্পের কাজ এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে। গতকাল বিকেলে ঢাকায় চীনা দূতাবাসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশে চীনের নাগরিকদের উপস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশের অনুরোধে চীনের যেসব নাগরিক ছুটি কাটাতে দেশে গেছেন, তাঁদের আপাতত ফিরতে নিষেধ করেছে চীনা দূতাবাস। এ ছাড়া নতুন প্রকল্পে আপাতত চীনের কোনো নাগরিককে না পাঠাতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব নেই। শুধু চীনে উৎপাদিত পণ্যের একটি চালান মিয়ানমার থেকে আসার সময় বাংলাদেশের গন্তব্যে আসেনি বলে শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের ৭৫ শতাংশ কাঁচামাল আসে চীন থেকে। এগুলো স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। এ ছাড়া কার্গোর মাধ্যমে যেসব পণ্য পরিবহন করা হয়, তাতে ভাইরাস থাকে না।