ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন ত্বকীর বাবা

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার বিচার শুরু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাকে মাদার অব হিউম্যানিটি বলা হয়। যদি সত্যিই আপনি মাদার অব হিউম্যানিটি হয়ে থাকেন তাহলে অবিলম্বে ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের নির্দেশ দিয়ে প্রমাণ দেবেন।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ ত্বকী নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয়। ওই দিন ত্বকীর বাবা এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ৮ মার্চ সকালে ত্বকীদের বাসার অদূরে শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা চারারগোপ এলাকার খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে ত্বকীর হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। আজ সেই অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি এ আহ্বান জানান।

ত্বকীর বাবা বলেন, এমন কোনো মাস নেই হত্যা, খুন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমাদের রাজপথে দাঁড়াতে হচ্ছে না। বিচার চাইতে হচ্ছে না। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে হত্যা, খুন, ধর্ষণসহ অপরাধের বিচার হওয়ার কথা ছিল। অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে, সরকার স্বাভাবিক নিয়মে অপরাধীদের বিচার করবে। সরকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের শপথ বাক্য পাঠ করলেও তারা শপথ ভঙ্গ করছে।

এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে র‍্যাব ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে সুলতান শওকত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রথমে মামলাটি পুলিশ তদন্ত করে। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন ত্বকীর বাবা। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে র‍্যাব মামলার তদন্ত শুরু করে।

এ হত্যাকাণ্ডের প্রথম বার্ষিকীতে ২০১৪ সালের মার্চে র‍্যাব সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। যেকোনো দিন এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়েনি। আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে ও আওয়ামী লীগের নেতা সাংসদ শামীম ওসমানের ভাতিজা।

গত ৮৩ মাসেও ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে রফিউর রাব্বী বলেন, ‘...অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। সরকারি সংস্থা র‌্যাব তো নির্যাতনের শিকারের ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেনি। র‌্যাব যদি প্রভাবিত হয়ে তদন্ত করে থাকে তাহলে তাদের বিচার করা হোক। না হলে খুনিদের বিচারের আওতায় আনা হোক।’

এই অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, স্বাধীন দেশে হত্যাকারী খুনিদের বিচার হবে না। খুনিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াবে, এটা হতে পারে না। খুনিদের বিচার করতে হবে। সাত বছর ধরে খুনিদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। অবিলম্বে ত্বকী, সাগর-রুনি, তনু, চঞ্চল, আশিক ভুলুসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।