গাম্বিয়ার জন্য তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা ওআইসির

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা পরিচালনায় গাম্বিয়ার তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে ওআইসি। রোববার থেকে অনুষ্ঠেয় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে এপ্রিলে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জেদ্দায় রোববার থেকে অনুষ্ঠেয় ওআইসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তিন দিনের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে গাম্বিয়ার জন্য তহবিল সংগ্রহে সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ৪৭ তম বৈঠকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় এ বিষয়টি আসবে।


মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, মূলত ওআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে জেদ্দায় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বৈঠকে বসছেন। আফ্রিকার দেশ নাইজারে ৩ ও ৪ এপ্রিল ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন। জেদ্দায় অনুষ্ঠেয় কর্মকর্তাদের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিসহ ওআইসির সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হবে।

সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশের এক কূটনীতিক শনিবার এই প্রতিবেদককে জানান, জেদ্দায় ওআইসির কর্মকর্তাদের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকটে জোটের ভূমিকার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আলোচনায় গত মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের আদেশের প্রসঙ্গটি আসতে পারে। বিশেষ করে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা গণহত্যার রোধে আইসিজে চার দফার নির্দেশনা দিয়েছে। এ বিষয়ে অন্তত জুলাই পর্যন্ত সময় পাবে মিয়ানমার। তা ছাড়া গাম্বিয়ার করা রোহিঙ্গা গণহত্যার মূল মামলার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। গণহত্যার মামলার বিষয়টি শেষ হতেও বেশ কয়েক বছর লাগবে। এই পরিস্থিতিতে গাম্বিয়াকে ওআইসির সদস্য দেশগুলো কীভাবে সহায়তা করবে তা নিয়ে আলোচনা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় মামলার কাজ চালাতে গাম্বিয়াকে আর্থিকসহ সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে ওই সম্মেলনের আয়োজন করার চেষ্টা চলছে।

গণহত্যা মামলার নেপথ্যে
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপের কথা ভাবতে শুরু করে ওআইসি। এ জন্য ওআইসি সদস্য দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনেইকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এসব দেশ সেভাবে এগিয়ে না আসায়, রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষায় সোচ্চার গাম্বিয়াকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয় ওআইসি।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালের ৩০ ও ৩১ মে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে গৃহীত ঢাকা ঘোষণার ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০১৯ সালের ৩১ মে মক্কায় ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে গণহত্যার মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০১৮ সালের শুরু থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে গাম্বিয়া ওআইসির বিভিন্ন ফোরামে প্রসঙ্গটি সামনে আনে। এরপর ওআইসি গাম্বিয়াকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়।

রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গঠিত ওআইসির মন্ত্রিসভা বিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাসহ আইনি পদক্ষেপ নিতে এ পর্যন্ত গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার খরচ ধরা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সৌদি আরব, তুরস্ক, কুয়েত, কাতারের পাশাপাশি বাংলাদেশও গাম্বিয়াকে ওই তহবিল সংগ্রহে সহযোগিতায় রাজি হয়েছে।

ওআইসির একাধিক কার্যক্রম ঢাকায়
এ বছর ওআইসির একাধিক অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওআইসিতে ব্যাপক সংস্কার নিয়ে এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকায় আলোচনা। এ ছাড়া এপ্রিলের মাঝামাঝি ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল হিসেবে ঢাকায় জড়ো হবেন ৫৭ জোটের সদস্য দেশগুলোর তরুণদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ভারতসহ বেশ কিছু অমুসলিম দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরুণ প্রতিনিধিরা।