মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত

ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির। ফাইল ছবি
ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির। ফাইল ছবি

ঘুষ লেনদেনের মামলায় পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। আগামী ৪ এপ্রিল এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

অন্যদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ডিআইজি মিজানুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। এই মামলায় পলাতক থাকায় ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না ও তাঁর ভাই মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে–সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন আগামী ৩ মার্চের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েস আজ রোববার এই আদেশ দেন।

আদালত সূত্র বলছে, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার শুনানির দিন ছিল। আজ আদালত এ মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়েই মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ বদলির আদেশ দেন। একই সঙ্গে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেন ৪ এপ্রিল। এই মামলায় কারাগারে থাকা আসামি ডিআইজি মিজানুর রহমান এবং দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরকে কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়।

ঘুষ লেনদেনের মামলায় গত ১৯ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমান এবং দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। এর আগে গত বছরের ১৬ জুলাই ডিআইজি মিজান ও দুদকের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, খন্দকার এনামুল বাছির কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর অবৈধভাবে অর্জিত ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন। ঘুষের ওই টাকার অবস্থান গোপন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।

একইভাবে ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় অর্থাৎ অনুসন্ধানের ফলাফল নিজের পক্ষে নেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেছেন। এ জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ অর্জনসংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় এনামুল বাছিরকে। ওই অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় গত ৯ জুন ডিআইজি মিজান ওই অনুসন্ধান থেকে বাঁচতে এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে। এর পরপরই দুদকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে খন্দকার এনামুল বাছিরের বক্তব্য গ্রহণ করে এবং পারিপার্শ্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর ১৩ জুন পরিচালক ফানাফিল্লাহর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে।

অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণ, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে। তাতে দেখা গেছে, গত বছরের ১৫ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমান একটি বাজারের ব্যাগে করে কিছু বইসহ ২৫ লাখ টাকা খন্দকার এনামুল বাছিরকে দেওয়ার জন্য রাজধানীর রমনা পার্কে আসেন। সেখানে কথাবার্তা শেষে একসঙ্গে বেরিয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় যান। এরপর খন্দকার এনামুল বাছির ২৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি নিয়ে তাঁর বাসার দিকে চলে যান। একইভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজান একটি শপিং ব্যাগে করে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে রমনা পার্কে যান। সেখানে আলাপ-আলোচনা শেষে দুজন শান্তিনগর এলাকায় চলে যান। শান্তিনগরে এনামুল বাছির ব্যাগটি নিয়ে চলে যান। দুদকের কাছে এ ঘটনার প্রযুক্তিগত প্রমাণের পাশাপাশি চাক্ষুষ সাক্ষীও রয়েছে।

মিজানের স্ত্রী ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানুর রহমানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না ও তাঁর ভাই মাহবুবুর রহমান এবং ভাগনে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৪ জুন মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এই মামলায় ডিআইজি মিজান ও তাঁর ভাগনে মাহমুদুল হাসান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। পলাতক আছেন সোহেলিয়া আনার রত্না ও তাঁর ভাই মাহবুবুর রহমান। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। আর আর তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ডিআইজি মিজানুর গত বছরের ১ জুলাই থেকে কারাগারে আছেন।