শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ৬ জনকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাস করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাড়ে ১৫ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র কেনার বিষয়ে আজ রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি অনুসন্ধানে গঠিত দুদকের অনুসন্ধান দলের প্রধান ও উপপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল প্রায় ছয় ঘণ্টা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এই ছয়জন হলেন ওই মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান শাহিন ভূঁইয়া, প্রভাষক পঙ্কজ কান্তি গোস্বামী, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর খান ও কুদ্দুস মিয়া, অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রাণ কৃষ্ণ বসাক এবং জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক নাসিমা খানম।

আগামীকাল একই বিষয়ে তলব করা হয়েছে কলেজের অধ্যক্ষ ও দরপত্র প্রস্তাব ও মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান ও একই কমিটির সদস্য চিকিৎসক হালিমা নাজনীনকে।

হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কম্পিউটার, আসবাব, মেডিকেল সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। দরপত্রের মাধ্যমে এ কাজ পায় ঢাকার নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ ও পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ১০৯ টাকায় ৫১৮ ধরনের মালামাল ক্রয় করে। ভ্যাটসহ মোট খরচ দেখানো হয় ১৫ কোটি ৪৯ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৭ টাকা। এতে ৪২ হাজার টাকার ল্যাপটপ কেনা হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকায়। ৬০ হাজার টাকার কালার প্রিন্টারের দাম পড়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ৩৯ হাজার টাকার রেফ্রিজারেটর ৮৫ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। এমনকি মানবদেহের মেডিকেল চার্ট; বাজারে যার দাম ৫০০ টাকা, তা কেনা হয়েছে ৭ হাজার টাকায়। এ ভাবে বেশি দামে ৫১৮ রকমের জিনিসপত্র ক্রয় করে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত ১ ডিসেম্বর এ নিয়ে প্রথম আলোতে সাড়ে ১৫ কোটি টাকার কেনায় বড় অনিয়ম শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে।

দুদকের উপপরিচালক সামসুল আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত দল গঠন করা হয় সম্প্রতি। এ তদন্ত দলের প্রধান এক চিঠি দিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান, দরপত্র প্রস্তাব ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নাসিমা খানমসহ আটজনকে আজ ও আগামীকাল সোমবার দু দফায় দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়।

আজ সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হন শাহিন ভূঁইয়া, পঙ্কজ কান্তি গোস্বামী, জাহাঙ্গীর খান, কুদ্দুস মিয়া, প্রাণ কৃষ্ণ বসাক এবং নাসিমা খানম। বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এদিকে এ ঘটনায় গঠিত স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব (নির্মাণ ও মেরামত অধিশাখা) মো. আজম খানকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ১৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন। এ প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা কলেজের দরপত্র নিয়ে অনিয়মের প্রমাণ পায় এ কমিটি।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি। হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যার নতুন ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কলেজটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস। বর্তমানে শিক্ষার্থী ১৫০ জন।