চাঁদাবাজির টাকা নিয়ে বিদেশেও মারামারি

সরোয়ার হোসেন।
সরোয়ার হোসেন।

আড়াই বছর আগে জামিনে বেরিয়ে ভারত হয়ে তাঁরা কাতারে পাড়ি জমান। সেখানে বসেই দেশে থাকা সহযোগীদের মাধ্যমে শুরু করেন চাঁদাবাজি। এঁরা হলেন নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন ও নুরনবী ম্যাক্সন। দুই মাস আগে চাঁদাবাজির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিদেশের মাটিতে মারামারিও করেন তাঁরা।

চট্টগ্রামে আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ আলী খানের অন্যতম সহযোগী সরোয়ার ও ম্যাক্সন। ভারতে পলাতক সাজ্জাদ ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত। ২০০০ সালে আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের ঘটনার পর গা-ঢাকা দেন সাজ্জাদ। সেই থেকে তাঁর হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং এলাকার অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন সরোয়ার ও ম্যাক্সন। অস্ত্র পরিচালনা ও কথায় কথায় গুলি ছুড়তে অভ্যস্ত তাঁরা। পুলিশ জানায়, সরোয়ার ও ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, ডবলমুরিং ও পাঁচলাইশ থানায় হত্যা, বিস্ফোরক, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ১৬টি করে মামলা রয়েছে।

ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিদেশে মারামারি
পুলিশ জানায়, জামিনে বেরিয়ে আড়াই বছর আগে (২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে) কাতারে পাড়ি জমানোর পর সরোয়ার ও ম্যাক্সন তাঁদের সহযোগীদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি শুরু করেন। হুন্ডির মাধ্যমে সহযোগীরা এই টাকা তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতেন। ভয়ে লোকজন তাঁদের চাহিদামতো টাকা দিয়ে দিতেন। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর নগরের মুরাদপুরের গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসায় যুক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে সরোয়ার ও ম্যাক্সনের নামে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তাঁদের সহযোগী কয়েকজন যুবক। তাঁদের কথামতো চাঁদা না দেওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর নয়াহাটে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। এরপর উজ্জ্বল দেওয়ানজী নামে আরেক ব্যক্তির কাছ থেকেও একই কায়দায় টাকা দাবি করা হয়। এরপর ২৪ অক্টোবর রাতে পাঁচ যুবককে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ থানা-পুলিশ। তাঁরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, সাজ্জাদ, সরোয়ার, ম্যাক্সনের জন্য চাঁদা আদায় করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দিতেন।

বিদেশে বসে দেশ থেকে যাওয়া চাঁদাবাজির টাকায় বেশ ভালোই কাটছিল সরোয়ার ও ম্যাক্সনের। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদাবাজির ২০ হাজার রিয়াল নিয়ে তাঁদের মধে৵ মারামারি হয়। কৌশলে দেড় মাস আগে ভারত হয়ে স্থলপথে দেশে চলে আসেন ম্যাক্সন। কাতার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সরোয়ার। এক মাস সাজাভোগের পর তাঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গত শনিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরদিন তাঁর দেওয়া তথে৵র ভিত্তিতে বায়েজিদের খোন্দকারাবাদ এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি একে-২২ রাইফেল, ৩০টি গুলি,২টি এলজি ও ৪টি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।

গতকাল বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে সরোয়ার আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, ম্যাক্সনের সঙ্গে কাতারে তাঁর দ্বন্দ্ব হয়। নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জেনেছেন, চাঁদাবাজির টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে কাতারে দুই সন্ত্রাসী মারামারি করে।

কারাগারেও মারামারিতে
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের (যমুনা-৫) একটি কক্ষে থাকতেন সরোয়ার, ম্যাক্সন ও সন্ত্রাসী নাছির। অন্য বন্দীরা একটি শৌচাগার ব্যবহার করলেও তাঁদের তিনজনের জন্য ছিল আলাদা শৌচাগার। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তুচ্ছ ঘটনায় সরোয়ার, ম্যাক্সন ও নাছিরের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নাছিরকে মারধর করেন তাঁরা। পরে নাছিরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কাশিমপুরে। ৩৬ মামলার আসামি নাছির ২৪ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন।