খালেদ-শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতের আমলে

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম। ফাইল ছবি
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম। ফাইল ছবি

মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রভাবশালী ঠিকাদার কথিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দেওয়া মাদক মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত।

আজ সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে ইমরুল কায়েস দুজনের মামলা আমলে নিয়ে অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেন। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মাদক মামলাটি ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। আর জি কে শামীমের মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২২ মার্চ। জি কে শামীমের মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে ২৫ মার্চ।

আদালত সূত্র বলছে, মামলার শুনানির দিন থাকায় কারাগার থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমকে আদালতে হাজির করা হয়। মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় গত বছরের ২০ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন র‍্যাব-৩–এর সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন।

প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীমসহ তাঁর সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন র‍্যাব-১–এর উপপরিদর্শক (এসআই) শেখর চন্দ্র মল্লিক। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ঢাকা মহানগর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। আর ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তখন থেকে খালেদ বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। ঢাকার মতিঝিলের ইয়ংমেন ক্লাব আরামবাগ ক্লাবসহ ফকিরাপুলের অনেক ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসিয়ে রমরমা মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন তিনি।

এসব অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। খালেদ খিলগাঁও শাজাহানপুর চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। পবিত্র কোরবানি ঈদের সময় শাজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া, কমলাপুর, সবুজবাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করতেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ফকিরাপুলসহ বেশির ভাগ এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ মাহমুদ। মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করার জন্য গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, দুটি অস্ত্রের লাইসেন্সে ৫০টি করে গুলি কেনার হিসাব থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তাঁর হেফাজত থেকে শটগানের সাতটি এবং পিস্তলের নয়টি অতিরিক্ত গুলি উদ্ধার করা হয়। এগুলো ২০১৭ সালের পর নবায়ন করা হয়নি। এগুলো অবৈধ অস্ত্র। অবৈধ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য খালেদ ব্যবহার করতেন এসব অবৈধ অস্ত্র। অবৈধ ব্যবসা ও রাজনৈতিক দাপটে পেশিশক্তি প্রয়োগ করার জন্যই দীর্ঘদিন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করে আসছিলেন। মামলায় ১৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানের নিকেতনে অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা শামীমসহ তাঁর সাত দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে মাদক, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ। প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীমসহ তাঁর সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, জি কে শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক এবং জুয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। আর শামীমের সহযোগীরা উচ্চ বেতনভোগী দুষ্কর্মের সহযোগী। অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে এসব অস্ত্রশস্ত্র বহন এবং প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল ও গরুর হাট–বাজারে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। আসামি শামীম অস্ত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদক ব্যবসা ও মানি লন্ডারিং করে আসছিলেন।