ভোটে অনাগ্রহ রাজনৈতিক দলগুলোকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে: মেনন

রাশেদ খান মেনন । ফাইল ছবি
রাশেদ খান মেনন । ফাইল ছবি

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুব কম ভোটার ভোট দিতে এসেছেন। ভোট থেকে মানুষের দূরত্ব গণতন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। মানুষের এমন অনাগ্রহ নির্বাচন তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোকেও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মেনন এসব কথা বলেন। তিনি অর্থ ও শিক্ষা খাত নিয়েও সমালোচনা করেন।

মেনন বলেন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই তারা মরিয়া আক্রমণ করবে। ধর্মবাদী তো বটেই, ওই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ডান ও তথাকথিত বামও এক হচ্ছে।

রাষ্ট্র কি অতীতের মতো মৌলবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন রেখে মেনন বলেন, ‘সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর স্বপক্ষে ওয়াজকারী জনৈক আজাহারী সম্পর্কে ধর্মমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জামায়াতের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং তাঁকে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় চলে যেতে দেওয়া হয়েছে। আর শরিয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে।’

অর্থ খাতের নাজুক পরিস্থিতির সমালোচনা করে মেনন বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী সংসদে অর্থনীতির ভালো অবস্থার কথা বললেও, বাইরে স্বীকার করেছেন যে রপ্তানিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নেতিবাচক। বিরোধী সদস্যরা তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী না বলায় তিনি দুঃখ পেয়েছেন। তবে ‘বৃক্ষ তোর নাম কি, ফলে পরিচয়’। জুন মাসের বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

মেনন বলেন, এ বছর ব্যাংক থেকে সরকারের যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার কথা, অর্থবছরের ছয় মাসেই তা প্রায় নেওয়া হয়ে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণ ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই ঋণ প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ঋণখেলাপি বাড়বে না বলে অর্থমন্ত্রী যে দাবি করেছিলেন, তা মিথ্যা প্রমাণ করে গত এক বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার ওপর খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে যে পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন তা ব্যবসায়ীবান্ধব হলেও, ব্যাংক বান্ধব বা অর্থনীতিবান্ধব ছিল না।

মেনন আরও বলেন, গত রোববার রিপোর্ট বেরিয়েছে বাংলাদেশ ঋণখেলাপিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে। গত দশ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ পাচারকারীরা কানাডা, মালয়েশিয়া, ব্যাংককে ‘বেগমপাড়া’ বানিয়েছে। তিনি সংসদে ঋণখেলাপিদের মতো এই অর্থ পাচারকারী-বেগমপাড়ার মালিকদের নাম প্রকাশ করার দাবি জানান।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, তিনি এর আগে খেলাপি ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য ৬৮ বিধিতে নোটিশ দিলেও স্পিকার তা আলোচনায় দেননি। এমনিতেই ৭০ বিধির কারণে সংসদ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের স্বাধীন মতামত দিতে পারেন না। তার ওপর এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা না গেলে সংসদে কেবল স্তুতিই শোনা যাবে। সংসদ সম্পর্কে জনগণের মতো সংসদ সদস্যরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

মেনন বলেন, ‘চীন যেখানে করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় সাত দিনে হাসপাতাল বানিয়ে ফেলছে, সেখানে আমাদের বিমানবন্দর-স্থল বন্দরে রোগ শনাক্তকরণের ব্যবস্থাই করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যে মনোভাবের কারণে ডেঙ্গু নিয়ে মেয়র-স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপেক্ষা-উপহাস করেছিলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সেটা হলে কি ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে সেটা বোঝা যায়।’

ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাংসদ বলেন, শিক্ষার অনেক সূচকে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু শিশুরা শৈশবের আনন্দ হারিয়েছে। পিএসসি পরীক্ষার ভয় তাদের প্রথম থেকেই কোচিং নির্ভর করেছে। ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে, প্রাথমিক শিক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি হলেও শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক কোনোটাই ভালোভাবে জানে না। শিক্ষার গোড়ায় এই গলদ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, এমনকি উচ্চশিক্ষায়ও প্রতিফলিত হচ্ছে। সংসদের বাইরে সান্ধ্যকোর্সের নামে বাণিজ্য, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আপত্তি, ভিসিদের দুর্নীতি, গবেষণা না করা— এসব বিষয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে।