নির্বাচনে জেতানোর আশ্বাস দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি

আসামি শহিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
আসামি শহিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে জিতিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে ঢাকার তিন কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে আদাবর থানা-পুলিশ। আসামির নাম শহিদুল ইসলাম ওরফে সাইদুল ওরফে সাজু ওরফে বিপ্লব (৩১)। তাঁর গ্রামের বাড়ি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নেংড়া বাজারে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গতকাল রোববার শহিদুল ইসলামকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। শহিদুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।

আদাবর থানা-পুলিশ আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, প্রতারক চক্রটি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতারণার মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। আসামি শহিদুল ডিজিটাল প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা। প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে নিজেদের ডিসি, এসপি, ওসি, ম্যাজিস্ট্রেট, ভ্যাট কর্মকর্তা, কাস্টমস কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে আসছিল। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্পুফিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি কর্মকর্তাদের নম্বর ক্লোন করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তিনজন কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে রোববার ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পলাশ ইসলাম (৩০) নামের এক আসামি। তিনজন প্রার্থীর কাছ থেকে সর্বমোট ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডিজিটাল প্রতারক চক্রটির সদস্যরা।

নির্বাচনে জিতিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে গত ২৪ জানুয়ারি আদাবর থানায় মামলা করেন কাউন্সিলর প্রার্থী কাউসার মোল্লা। কাউসার ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ছিলেন।

আসামি পলাশ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
আসামি পলাশ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

মামলার বাদী কাউসার মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘২২ জানুয়ারি সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটে আমার বাবার নম্বরে একটি কল আসে। কলটি আমি ধরি। অজ্ঞাত লোক নিজেকে আদাবর থানার ওসি হিসেবে দাবি করেন। আমাকে বলেন, নির্বাচনে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বমোট ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। নির্বাচনের আগে দিতে হবে ৫ লাখ আর নির্বাচনের পরে দিতে হবে ১০ লাখ টাকা। অজ্ঞাত ওই লোক একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নম্বর দিয়ে বলেন, জিতিয়ে দেওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেবেন ওই ম্যাজিস্ট্রেট। ম্যাজিস্ট্রেটের নম্বরে ফোন দেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট নিজেও বলেন, নির্বাচনে জিতিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তাঁদের কথামতো বিকাশের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার পরদিন আবার আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তখন আমার সন্দেহ হয়। আমি নিজে আদাবর থানার ওসিকে ফোন দিই।’

কাউন্সিলর প্রার্থী মো. কাউসার মোল্লা আরও বলেন, ‘থানায় গিয়ে জানতে পারি, আমার মতো আরও দুজন কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। আবুল কাশেম ও ডেইজি সারোয়ার নামের দুজন কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছ থেকে সর্বমোট ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। আমার কাছ থেকে নেওয়া ৫ লাখ টাকা আমি ফিরে পাইনি।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল চক্রটির সদস্যরা। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর প্রার্থী কাউসার মোল্লার কাছ থেকে ৫ লাখ, আবুল কাশেমের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।