সম্ভাবনাময় ইকোপার্কটি অব্যবস্থাপনার চক্রে
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বঙ্গবন্ধু সেতু ইকোপার্কে রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এখানে যথাযথভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে এবং ব্যবস্থাপনা ভালো হলে ভ্রমণবিলাসীদের কাছে এটি হয়ে উঠতে পারে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। হতে পারে সরকারের আয়ের একটি বড় উৎস।
স্থানীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে ৬০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় এই ইকোপার্কটি। বিভিন্ন প্রকার ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমারোহে গড়ে তোলা হয়েছে এই পার্কটি। এ ছাড়া এখানে রয়েছে বানর, খরগোশসহ বিভিন্ন প্রকার পশুপাখি। রয়েছে ঝাউবাগান, পাকা সড়ক। প্রতিদিন ১০ টাকা মূল্যের টিকিটের বিনিময়ে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবার–পরিজন নিয়ে দর্শনার্থীরা বিনোদনের জন্য বেড়াতে আসেন এখানে। উত্তরের জেলাগুলোর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফরও হয়ে থাকে এই পার্কটিতে।
পার্কটিতে খাবারের ক্যানটিন ও বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকায় পরিবার–পরিজন নিয়ে অনেকটা অসুবিধায় পড়তে হয় দর্শনার্থীদের। একসময় পার্কটিকে ঘিরে বাইরে থেকে কিছু বখাটে এসে দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্ত করা, মালামাল ছিনতাই, অবৈধ চাঁদা দাবি করাসহ নানা অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেটি অনেকটাই কমে গেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে পার্কটিতে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু দর্শনার্থী থাকলেও পার্কের আনাচকানাচে দল বেঁধে বসে রয়েছে আশপাশের এলাকার বখাটেরা। দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা বিষয়টি পছন্দ করছেন না।
কুড়িগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী শিরিন পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে খাওয়ার জন্য ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। টাওয়ার, গেস্টহাউস বা ফুলের বাগান যদি থাকত তবে আকর্ষণ আরও বাড়ত। এ ছাড়া রাস্তাঘাটের পরিস্থিতিও ভালো না। চারপাশ যে ঘুরে দেখব, সেটার জন্য কোনো সুব্যবস্থা নেই।’ উল্লাপাড়া থেকে আসা আপেল মাহমুদ বলেন, কিছুদিন আগে নিরাপত্তার অভাবসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এখানে মানুষ আসতে চাইত না। বর্তমানে আগের চেয়ে সার্বিক পরিবেশ একটু ভালো হলেও এখানে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দর্শনার্থী আগের চেয়ে অনেক কম হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ শহর থেকে আসা বিলকিছ আখতার বলেন, এই পার্কটিতে যদি ব্যতিক্রমী কিছু পশুপাখি যোগ করা যায়, তাহলে অনেকেই আসবে বলে তিনি মনে করেন।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক জহুরুল হক বলেন, ‘পার্কটির সৌন্দর্য বাড়ানোসহ আরও কিছু অবকাঠামো তৈরি করা হলে সরকারের রাজস্ব বাড়ার পাশাপাশি এটি হতে পারে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। আমরা আশা করি, অতি শিগগির জেলার একমাত্র সরকারি বঙ্গবন্ধু সেতু ইকোপার্কটির উন্নতকরণে সরকারের পক্ষ থেকে সফল উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বঙ্গবন্ধু সেতু ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বন কর্মকর্তা রিপন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ইকোপার্কের গুণগত মান বাড়াতে নতুন কিছু সংযোজনসহ রাস্তা, পিকনিক স্পট, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, কটেজ, রেস্টহাউস নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে এই পার্ক আরও ভালো হবে। একসময় পার্কটি ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও বর্তমানে এটি সরকারের বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে তাদের কর্মী দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।