এই সরকারের আমলে আগের দু-একটি নির্বাচন বর্জন সঠিক হয়নি: ফখরুল

চট্টগ্রামে বিএনপির কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সৌরভ দাশ
চট্টগ্রামে বিএনপির কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সৌরভ দাশ

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের আমলে আগের দু-একটি নির্বাচন বর্জন সঠিক হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলকে জনগণের সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে চায়।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে এই মন্তব্য করেন। মতবিনিময় অনুষ্ঠান কার্যত জনসভায় পরিণত হয়। চট্টগ্রাম নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে কেন? কারণ, বিএনপি একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাস করে। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথে ক্ষমতার পরিবর্তনের পথ নেই, হওয়া উচিত নয়। সে কারণেই বিএনপি সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

সরকার বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় বলে আসছে বিএনপি নেই, বিএনপির কোনো শক্তি নেই। আরে বিএনপির যদি শক্তি না-ই থাকে, তাহলে বিএনপির বিরুদ্ধে এত কথা বলেন কেন?

সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এমন একটা দিন নেই, এমন একটা ক্ষণ নেই, এমন একটা বক্তৃতা নেই, যেখানে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলেন না আওয়ামী লীগ নেতারা। তাহলে বিএনপি হচ্ছে সরকারের জন্য একটা বড় সমস্যা। আসলে সমস্যা হওয়ার কারণ হচ্ছে বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নির্বাচনে বিশ্বাস করে, জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে। বিএনপি অতীতে যেমন লড়াই-সংগ্রাম করেছে গণতন্ত্রের জন্য, এবারও লড়াই করে বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা আমরা বলেছিলাম। আওয়ামী লীগের দলীয় রাষ্ট্রপতি আমাদের কথা শোনেননি। তিনি এমন সব লোকজন দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, যাঁদের কোনো যোগ্যতা নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথা শুনলে মনে হয় ওনার নির্বাচন কমিশন পরিচালনার কোনো যোগ্যতা নেই।’
ফখরুল বলেন, এমন ইভিএম চালু করেছেন, সিইসির নিজের আঙুলের ছাপই মেলে না। তাঁর ভোট দিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। আসলে আওয়ামী লীগ পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে তামাশায় পরিণত হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। অনেকে আমাদের প্রশ্ন করেন, সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, নির্বাচনে যাচ্ছেন কেন? কারণ, আমরা একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথে ক্ষমতার পরিবর্তনের পথ নেই, হওয়া উচিত না। সে কারণেই আমরা সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’

এই সরকারের আমলে আগের দু-একটি নির্বাচন বর্জন সঠিক হয়নি বলে সভায় মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে অতীতে দু-একটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। এরপর থেকে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা আমাদের দলকে জনগণের সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে চাই। আমরা মনে করি, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে। নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আমরা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলে মনে করছি।’

নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই আওয়ামী লীগ কেয়ারটেকার সরকারের দাবি নিয়ে এসেছিল। তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল, হরতাল করেছিল। জনগণের দাবি তখন আমরা মেনে নিয়েছিলাম, কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গদি রক্ষার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের বিধান তুলে দেয় আওয়ামী লীগ। পর্যায়ক্রমে সংবিধানে এমন সব আইন সংযোজন করে, যাতে একদলীয় ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা যায়। এসবের বিরুদ্ধে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

নেতা-কর্মীদের অভয় দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যারা বিএনপি করি বা অঙ্গসংগঠন করি, আমাদের কখনো হতাশ হলে চলবে না। আপনাদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, প্রতিনিয়ত নির্যাতন হচ্ছে, প্রচণ্ড নির্যাতন হচ্ছে, খুন করছে, গুম করছে, তারপরও আপনারা মাথা নোয়াননি। হার স্বীকার করেননি। সে জন্য বলছি, হতাশা কখনো আপনাদের আসল জায়গায় পৌঁছে দেয়নি। বিএনপির দিকে মানুষ আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। বিএনপি আন্দোলন শুরু করবে, সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করবে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।’

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, নেতা-কর্মীদের মামলা দিয়ে, গুম করে দেশপ্রেমিক মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আওয়ামী লীগ আজ একটি নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। সরকার নিজের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য যখন যে যা হুকুম দিচ্ছে, সেটাই মেনে নিচ্ছে। আমাদের সীমান্তে ভারত প্রতিদিন মানুষ হত্যা করে, সরকারের প্রতিবাদ করার সাহস হয় না। আমরা নদীতে পানি পাই না, সরকার ভারতের কাছ থেকে পানি আনতে পারে না। অথচ ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও সুখে নেই।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক হাইব্রিড নেতা, মন্ত্রী-এমপি আছেন। এই চট্টগ্রামেও একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আছেন, যিনি অনেক বড় বড় কথা বলেন, খুব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও নাকি কথা বলেন। আরে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কি ওনার জন্ম হয়েছিল?

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় সদস্য মীর মো. হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও বর্তমান আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম।