বাগানে পেতে রাখা কারেন্ট জালে প্রাণ গেল ঘুঘু-মাছরাঙা-বুলবুলিসহ শতাধিক পাখির

কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা গেছে ঘুঘু-মাছরাঙা-বুলবুলিসহর শতাধিক পাখি। ছোট পাইকপাড়া, পবা, রাজশাহী, ১২ ফেব্রুয়ারি। ছবি: শহীদুল ইসলাম
কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা গেছে ঘুঘু-মাছরাঙা-বুলবুলিসহর শতাধিক পাখি। ছোট পাইকপাড়া, পবা, রাজশাহী, ১২ ফেব্রুয়ারি। ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহীর পবা উপজেলায় কুলবাগানে (বরই বাগান) পেতে রাখা কারেন্ট জালে মারা গেছে ঘুঘু, মাছরাঙা, বুলবুলি, ফিঙে, কাঠঠোকরাসহ শতাধিক পাখি। এই খবর পেয়ে বুধবার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন অভিযান চালিয়ে ওই কুলবাগানের জাল তুলে পুড়িয়ে দিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছোট পাইকপাড়া গ্রামে প্রায় ১৭ বিঘার কুলবাগানে পাতা কারেন্ট জালে শতাধিক পাখি আটকা পড়ে মারা গেছে। অনেক পাখি পচে গন্ধ বের হচ্ছে। এর মধ্যে বাদুড়ও রয়েছে। এই দৃশ্য দেখে বুধবার উপজেলার নওহাটা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নম্বর জোগাড় করে তাঁকে খবর দেন।

ফয়সাল ইসলাম বলে, চার বন্ধু মিলে বিলে ঘুরতে গিয়ে জালে পাখি পড়ে থাকতে দেখে। তার মনে হয় বিষয়টি ইউএনওকে জানানো দরকার। তখন এক সাংবাদিকের সহায়তায় ইউএনও এর নম্বর সংগ্রহ বিষয়টি সে জানায়। সেই সময় ইউএনও একটি সভায় ছিলেন। সভা শেষ করে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ইউএনও ওই বাগানে অভিযান চালান।

কুলবাগানে পেতে রাখা কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা গেছে বিভিন্ন পাখি। ছোট পাইকপাড়া, পবা, রাজশাহী, ১২ ফেব্রুয়ারি। ছবি: শহীদুল ইসলাম
কুলবাগানে পেতে রাখা কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা গেছে বিভিন্ন পাখি। ছোট পাইকপাড়া, পবা, রাজশাহী, ১২ ফেব্রুয়ারি। ছবি: শহীদুল ইসলাম

ইউএনও শাহাদাত হোসেন বলেন, ফোন পেয়ে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেন তিনি। যেসব পাখি কুল খায় না, জালে পড়ে সেসব পাখিও মারা গেছে। অনেক দিন ধরে মরে জালে আটকা থাকার কারণে এলাকায় পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। সেখানে বাগান মালিক না থাকার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায়নি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নওহাটা পৌর এলাকার বাসিন্দা ওই বাগান মালিক বরকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদুড় বরই নষ্ট করে দেয়, এ জন্য বাদুড় ঠেকাতে জাল পাতা হয়েছিল।’

পাখির খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো পাখি ঠেকানোর জন্যই ফলবাগানে জাল পাতা উচিত নয়। কারণ পাখিরা ফল নষ্ট করতে পারে না। মাছরাঙা মূলত মাছ খায়, ঘুঘু শস্যদানা খায়। তবে বুলবুলি ফল খায়। কিন্তু খুব ভালোভাবে না পাকলে সেটা খেতে পারে না। ফল খাওয়া অন্য পাখিরাও তাই করে। তবে আমরা তো ফল ভালোভাবে গাছে পাকতে দিই না। আগেই পেড়ে ফেলি।’ তিনি বলেন, ‘বাদুড় ফল নষ্ট করে। বাদুড়ের ভয়ে মালিক এটা করেছেন। অন্য পাখিরা হয়তো একটু বিশ্রামের জন্য বা ঘুমোতে এসেছিল। জালে পড়ে তাদের এই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে। এটা অন্যায়।’