ছেলের করোনাভাইরাসের গুজব, শ্যামনগরে মায়ের মৃত্যু

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রতন রপ্তান (৩২) আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন ভারতে। গত সোমবার দুপুরে সেখান থেকে নিজ গ্রাম পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালীতে ফিরছিলেন। তবে গায়ে জ্বর ও সর্দি–কাশি থাকায় ভোমরা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে তাঁকে নেওয়া হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। এরই মধ্যে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হবে।

রতনের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, ছেলেকে মেরে ফেলা হবে—এ কথা শুনে মুষড়ে পড়েন রতনের মা রেণুকা রপ্তান (৫৬)। এরপর সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অজয় সাহা বলেন, করোনাভাইরাস সন্দেহে রতনকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি চলে আসেন। পরে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে খোঁজাখুঁজি করা হয়। এরই মধ্যে তাঁর মা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলেকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হবে—এমন গুজবে তিনি আতঙ্কিত হয়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অজয় সাহা জানান, রতনের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে রক্ত নেওয়ার পর রতন বাড়ি চলে আসেন। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাঁকে খুঁজতে থাকেন। এমনকি তাঁর (চেয়ারম্যান) কাছেও শ্যামনগর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ফোন করে রতনের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। এরই মধ্যে এলাকায় একশ্রেণির মানুষ গুজব ছড়িয়ে দেয়, রতনের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হবে। এসব শুনে রেণুকা রপ্তান আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে ওই রাতেই তিনি মারা যান।

অজয় সাহা বলেন, বুধবার রতনের বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানো হয়েছিল। তিনি ভালো আছেন। যাতে মানুষ আতঙ্কিত না হয়, এ জন্য তিনিও বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়িতে যাবেন।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসাইন সাফায়াত বলেন, রতনের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো জীবাণু পাওয়া যায়নি। এলাকার লোকের গুজবের কারণে তাঁর মা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে তিনি শুনেছেন।