৫ লাখ টাকার তেজপাতা বিক্রি করেন তিনি

ঝিনাইদহে গাছের তেজপাতা বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন কৃষক জয়নুদ্দিন  খাঁ। ছবিতে তেজপাতাখেতে এই কৃষক।  ছবি: প্রথম আলো
ঝিনাইদহে গাছের তেজপাতা বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন কৃষক জয়নুদ্দিন খাঁ। ছবিতে তেজপাতাখেতে এই কৃষক। ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল গ্রামের কৃষক জয়নুদ্দিন খাঁ তেজপাতা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মাত্র ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করে বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকার তেজপাতা বিক্রি করেন তিনি। 

কৃষক জয়নুদ্দিন বলেন, ২০০৮ সালে তিনি মাত্র এক বিঘা জমিতে ১০০ গাছ লাগানোর মাধ্যমে এই চাষ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তাঁর চার বিঘায় ৪০০ গাছ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর এই চাষ দেখে তাঁরই গ্রামের আরও দুই কৃষক বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতার চাষ শুরু করেছেন। 

উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাদিরকোল গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক জয়নুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৭ সালে তিনি ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে এই তেজপাতার চাষ দেখেন। এই চাষ দেখে তাঁর খুব আগ্রহ হয় তেজপাতা চাষের। কিন্তু কোথাও চারা পাচ্ছিলেন না। এমন সময় তাঁর এক বন্ধু খবর দেন এই চারা খুলনার বেজেরডাঙ্গা এলাকায় পাওয়া যায়। পরে ২০০৮ সালে বেজেরডাঙ্গা থেকে চারা নিয়ে আসেন। জয়নুদ্দিন জানান, ওই বছর ২০০ টাকা পিস দরে ১০০ চারা ক্রয় করেন। এগুলো বাড়ির পাশে অপেক্ষাকৃত জঙ্গল আকৃতির জমিতে রোপণ করেন। এরপর পরিচর্যা করতে থাকেন ওই গাছগুলো। এভাবে চার বছর পেরিয়ে গেলে গাছের ডালে ডালে পাতা ভরে যায়। তখনই পাতা ভাঙতে শুরু করেন। সেই থেকে তিনি প্রতিবছর দুবার গাছ থেকে পাতা ভেঙে বিক্রি করেন। পাশাপাশি এটি লাভজনক হওয়ায় আরও গাছ লাগিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর চার বিঘা জমিতে ৪০০ তেজপাতাগাছ রয়েছে। ৪৬ শতাংশে বিঘা হিসাবে প্রতি বিঘায় চারা রোপণ করা যায় ১০০টি। এই চাষ অপেক্ষাকৃত জঙ্গল পেরিয়ে ভালো চাষযোগ্য জমিতেও ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, তেজপাতা চাষ করতে হলে জমিতে নামমাত্র চাষ দিয়ে নিতে হয়। এরপর সেখানে জৈব সার ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দিয়ে চারা লাগাতে হয়। এই গাছ ছাগল-গরুতে খায় না। পাতা গাছের ডালে ডালে থাকায় চুরি হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। একটি চারা রোপণের চার বছর পর থেকে পাতা পাওয়া যায়। ৫০ বছর পর্যন্ত পাতা পাওয়া যাবে। বর্তমানে প্রতিটি গাছে বছরে ২০ কেজি করে পাতা পওয়া যায়, যা বাজারে ৬০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি করা যায়। এতে তাঁর ৪০০ গাছে প্রায় ৫ লাখ টাকার পাতা বিক্রি হয়। এই পাতা পেতে বর্তমানে তাঁর খরচ হয় গাছপ্রতি ১০০ টাকা। এই চাষে পরিশ্রম কম, আর একবার রোপণ করলে জীবনের বেশির ভাগ সময় ফলন পাওয়া যায়। তাই তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই চাষ করছেন। প্রথম বছর ৩ মণ পাতা বিক্রি করতে পারলেও বর্তমানে ১২ মণ পর্যন্ত পাতা বিক্রি করছেন। আগামী মৌসুমে ২০ মণ পাতা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন। 

জয়নুদ্দিন খাঁ পেশায় কৃষক। মাঠে তাঁর ১৮ বিঘা চাষযোগ্য জমি আছে। তাঁর তিন মেয়ে আর এক ছেলে। মেয়ে রাজিয়া খাতুন, রুজিয়া খাতুন ও কাজল পারভিনকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে জাকির হোসেনও বিয়ে করেছেন। ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে ঢাকায় থাকেন। জয়নুদ্দিন খাঁ তাঁর স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন। ইতিপূর্বে কাঁচা বাড়িতে থাকলেও বর্তমানে একতলাবিশিষ্ট পাকা বাড়ি করেছেন। একসময় মাঠে চাষযোগ্য জমি থাকা সত্ত্বেও ভালো ফসল ফলাতে না পেরে কষ্টে জীবন কাটাতে হয়েছে। এখন আর কোনো কিছুর জন্য কারও কাছে হাত পাততে হয় না। 

কাদিরকোল গ্রামের আবুল কালাম জানান, জয়নুদ্দিনকে দেখে তিনিও এই তেজপাতা চাষ শুরু করেছেন। প্রথম বছর ৩৫ শতক জমিতে চাষ করেছেন। ভালো পাতাও পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আরও বেশি চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে। আরেক কৃষক মিজানুর রহমানও বাড়ির আঙিনায় ১০ শতক জমিতে এই তেজপাতা চাষ করেছেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃপাংশু কুমার জানান, এটা খুবই লাভজনক ফসল।