দুপুরের পর চট্টগ্রাম নগরের চার মোড়ে চলাই দায়

ফুটপাত ও সড়ক দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকান। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত রোববার দুপুর ১২টায় বহদ্দারহাট এলাকার বহদ্দারপুকুর পূর্ব পাড়ে।  জুয়েল শীল
ফুটপাত ও সড়ক দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকান। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত রোববার দুপুর ১২টায় বহদ্দারহাট এলাকার বহদ্দারপুকুর পূর্ব পাড়ে। জুয়েল শীল

একসময় দেখে বোঝার উপায় ছিল না, চট্টগ্রাম নিউমার্কেট এলাকা ফুটপাত নাকি ব্যবসাকেন্দ্র। হাঁটার জায়গাজুড়ে পণ্যসামগ্রীর পসরা আর হকারদের ব্যস্ততা দেখা যেত। পথচারীরা ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাঁটবেন, সেখানেও ছিল একই অবস্থা। 

নিউমার্কেটসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু মোড় ছোট ছোট ভাসমান দোকান, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাতে হয় পথচারীদের। একদিকে ফুটপাত দখল, অন্যদিকে রাস্তায়ও ঠিকভাবে হাঁটার অবস্থা ছিল না। ফুটপাত থেকে নামতেই রাস্তার পাশজুড়ে সারি সারি রিকশা আর মোটরসাইকেল। তখন বিড়ম্বনা আরও বাড়ে। 

এই চিত্র কেবল চট্টগ্রাম নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে নয়, ইপিজেড মোড়, বহদ্দারহাট, ষোলশহর জংশন, জুবিলী রোড, আগ্রাবাদ ও জিইসি মোড়েও ছিল। সম্প্রতি পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। 

প্রায় পাঁচ বছর আগে অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল ফুটপাতমুক্ত নগর। তিনি শুরুও করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক চাপের কারণে আপস করতে হয়েছে। ফলে বেশির ভাগ সময়জুড়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ ফুটপাত এবং সংলগ্ন রাস্তা হকারদের দখলে ছিল। সম্প্রতি নগরের ফুটপাতগুলো আবার হকারমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

সরজমিনে ঘুরে নগরের বিমানবন্দর সড়কের ইপিজেড মোড়ে কোনো হকার দেখা যায়নি। কয়েক মাস আগে সড়কের দুই পাশ থেকে সহস্রাধিক হকার তুলে দেওয়া হয়। হকার পসরা নিয়ে বসলে মানুষেরও জটলা থাকে। ফলে ওই মোড়ে যানজট লেগে থাকত। হকার উচ্ছেদের পর ইপিজেড মোড়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। 

এদিকে নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত নিউমার্কেট মোড় ও বহদ্দারহাট এলাকায় বিকেল চারটার আগে হকার বসতে পারছেন না। প্রশাসন থেকে বিকেল পাঁচটার আগে হকার বসা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হকাররা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে চলছেন। কিন্তু আন্দরকিল্লা মোড়ে সকাল থেকে হকারদের অবস্থান রয়েছে। নগরের ব্যস্ততম জিইসি মোড়েও বিকেলের পর হকাররা বসছেন। 

জানতে চাইলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন  বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ে হকারমুক্ত ফুটপাত করার প্রতিশ্রুতি ছিল আমার। সেটা কার্যকর হয়েছে। আমরা চাই, নগরবাসীর হাঁটাচলায় কোনো সমস্যা না হোক।’ 

মেয়র নাছির আরও বলেন, বিকেল পাঁচটার আগে নিউমার্কেট ও বহদ্দারহাট মোড় হকাররা বসছেন না। এতে ফুটপাতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তবে এটাও ঠিক যে, নগরের নিম্নআয়ের লোকের সংখ্যা ১৫ লাখ এবং তাঁরা হকারদের কাছ থেকে কম দামে মালামাল কেনে নেন। হকার এবং নিম্নআয়ের লোকজনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সবাইকে উচ্ছেদ করে দিলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের জুবিলী রোডে এলোমেলো পড়ে আছে সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি। এই পথে লোকজন চলাচল করছে খুব কষ্ট করে। একদম গা ঘেঁষাঘেষি করে। নগরের জিইসি মোড়ে সন্ধ্যার পরে ভ্যান গাড়ি এবং পসরা নিয়ে হকার বসছেন। এতে ব্যস্ততম এই মোড়ে জটলা লেগে থাকছে। সেখানে পাশাপাশি দুজনের হাঁটার কোনো সুযোগ থাকছে না। 

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, ‘টাইগারপাস থেকে বিমানবন্দর, ষোলশহর থেকে অক্সিজেন, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন, কোতোয়ালি থেকে শাহ আমানত সেতু এবং জিইসি মোড়ে কোনো হকার বসতে পারবেন না। তবে নিউমার্কেটসহ কিছু এলাকায় বিকেলের পর হকার বসার ব্যবস্থা করেছেন মেয়র মহোদয়। কিন্তু পথচারীদের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়, এমন জায়গায় হকার না বসতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।’