পুলিশের সেবা কার্যক্রমে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ছবির ‘ওসি এখন আপনার পাশে’ কার্যক্রমে জিডি করার পর রিসিভ কপি তুলে দিচ্ছেন থানার ওসি। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট ভিএড পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আব্বাস হোসাইন
ছবির ‘ওসি এখন আপনার পাশে’ কার্যক্রমে জিডি করার পর রিসিভ কপি তুলে দিচ্ছেন থানার ওসি। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট ভিএড পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আব্বাস হোসাইন

বাজারের মাঠে চেয়ার–টেবিল নিয়ে বসে আছে পুলিশ। মানুষের অভিযোগ শুনছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। অভিযোগ লিখছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজেই। পাশে সহযোগী হিসেবে ল্যাপটপে লিখিত আকারে ডায়েরি ও অভিযোগ লিখছেন আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা।

অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিতে মাইকে ডাকছেন এক পুলিশ সদস্য। গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট বাজারে এমন চিত্র দেখা যায়। ‘ওসি এখন আপনার পাশে’ নামে একটি ব্যতিক্রমী কার্যক্রম পরিচালনা করে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানা–পুলিশ।

পুলিশের সেবা কার্যক্রমের এক ফাঁকে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কার্যক্রমটি লোক দেখানো নয়। থানায় যেতে অনেকেই দালাল ধরেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষের থানায় যেতে কষ্ট হয়। তাই তাদের এ কার্যক্রম। কার্যক্রমটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রতি সপ্তাহে চালানো হবে। ওসি এখন আপনার পাশে কার্যক্রমের আগেই সেবা নিতে পুরো এলাকায় মাইকিং করা হয়।

পুলিশের সেবার কথা শুনে সলিল দাশ, রশিদ আহমদ ও বেসন্ত বড়ুয়া সাধারণ ডায়েরি করতে আসেন। ডায়েরি নেওয়ার পর তাঁদের প্রাপ্তি স্বীকার কাগজ দেওয়া হয়। এমন সেবা পেয়ে তাঁরা খুশি। কার্যক্রমের প্রথম দিনে তিনটি সাধারণ ডায়েরিসহ নয়টি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা রাঙ্গুনিয়া থানার উপপরিদর্শক সুমন কুমার দে। তিনি বলেন, মাদক, ইভটিজিং, ছিনতাইসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের মৌখিক অভিযোগ পেয়ে নোট করা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন থানার উপপরিদর্শক মো. ইসমাঈল হোসেন, মাহাবুব হোসেনসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান আহামদ ছৈয়দ তালুকদার ও লালানগর ইউপি চেয়ারম্যান মীর তৌহিদুল ইসলাম। এ সময় অনেক অভিযোগ মাইকে প্রকাশ্যে বলেন অভিযোগকারীরা।

অভিযোগ দিতে আসা দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের শিক্ষক শাহ আলম বলেন, থানায় যেতে মানুষের যে ভয় কাজ করত, এই উদ্যোগের কারণে তা দূর হয়ে যাবে। ভয় না করে ওসির সঙ্গে এভাবে সরাসরি কথা বলার পর মনে শান্তি পাচ্ছে এলাকার মানুষ।

এলাকার নির্দিষ্ট কোন জায়গায় মাদক বেচাকেনা হচ্ছে—ওসিকে সে অভিযোগ দেন এক তরুণ। বখাটেরা কোন কোন স্কুলের সামনে অবস্থান নেয়, তা–ও জানান তিনি।

অভিযোগ দিতে এসে উল্টো এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজা ভুবন ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম। তিনি বলেন, তাঁর এলাকায় রাতে উন্মুক্ত দোকানে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে। স্থানীয় এক পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ তোলেন তিনি।

ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তাঁকে প্রত্যাহার করা হবে।