উৎসবের দিনে জনসমুদ্র

নজরুল জীবনী: আবদুল মান্নান সৈয়দ, দ্য ম্যান ফ্রম পাকিস্তান অনুবাদ: শেখ আবদুল হাকিম, পুরোনো টাওয়ার: রকিব হাসান, যদি কখনো: সুমন্ত আসলাম
নজরুল জীবনী: আবদুল মান্নান সৈয়দ, দ্য ম্যান ফ্রম পাকিস্তান অনুবাদ: শেখ আবদুল হাকিম, পুরোনো টাওয়ার: রকিব হাসান, যদি কখনো: সুমন্ত আসলাম

তিন তিথি একসঙ্গে মিলে গেলে শাস্ত্রে তাকে বলে ত্র্যহস্পর্শ। নির্বাচন কমিশনের চাকুরে এহসানুল কবির যখন বলেন, ‘আজ এক ঢিলে তিন পাখি মারার সুযোগ পেয়ে সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইনি’, তখন ত্র্যহস্পর্শের কথা মনে পড়ল। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এই তিনের যোগসূত্র তৈরি হয়েছিল পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন মিলিয়ে। ফলে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড়।

গতকাল সকালে মেলায় ছিল শিশুপ্রহর, মধ্যাহ্নের পর থেকে সর্বজনীন। পার্ল পাবলিকেশনের সামনে বিকেলে কথা হচ্ছিল এহসানুল কবিরের সঙ্গে। গায়ে ময়ূরকণ্ঠী রঙের পাঞ্জাবি, স্ত্রী আনিকা ফারজানা অবশ্য পুরোদস্তুর বাসন্তী সাজে। মাথায় তাজা ফুলের রিং, হাতেও ফুলের বালা। তিনি আছেন এক বেসরকারি ব্যাংকে। জানালেন, বিয়ের পর এই প্রথম বইমেলা, আবার দুজনেরই ছুটি, তাই পরিকল্পনা করেই মেলায় এসেছেন। তাঁদের মতো অনেকেই জুটি বেঁধে, দল বেঁধে অথবা সপরিবার এসেছিলেন মাসব্যাপী বইয়ের উৎসবে।

নববসন্তের মনোরম কবোষ্ণ আবহাওয়া। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছতলা দিয়ে মেলার ছাউনি। প্যাভিলিয়নগুলো মাঠের মাঝবরাবর। উত্তরে বিশাল জলাধারের ভেতরে দীর্ঘ স্বাধীনতাস্তম্ভ।  মাঝেমধ্যে বাঁশের তৈরি নান্দনিক স্থাপনা, এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে ‘সংগ্রাম’, ‘অর্জন’, ‘মুক্তি’, ‘শেকড়’—এসব নামে। কোনো কোনোটির ভেতরে অনেকটা গোলকধাঁধার মতো ব্যাপার। লোকজন তার ভেতরে ঢুকে ঘুরছেন, সেলফোনের ক্যামেরা তাক করে ছবিও তুলছেন দেদার। আবার খেলার মাঠে বিকেলের ম্লান হয়ে আসা রোদ গায়ে মেখে তুমুল আড্ডায় মেতেছে পোশাক আর সাজসজ্জায় লালে-বাসন্তীতে রঙিন তরুণ-তরুণীর দল।

বসন্তে-ভালোবাসা দিবসে বরাবরই মেলায় বেচাকেনা বাড়ে। গতকাল শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বললেন, মেলায় সাধারণত প্রথমার্ধের পর থেকে বিক্রি বাড়তে থাকে। পয়লা ফাল্গুন থেকেই এই পর্ব শুরু হয়। শেষ সপ্তাহে বিক্রি তুঙ্গে ওঠে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচয় সূত্রবিষয়ক গ্রন্থ সুমি শারমীনের  প্রাকৃতজন ইত্যাদি। অনন্যার স্টলে বইতে স্বাক্ষর দিচ্ছিলেন কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন। এবার বাবান সিরিজে তাঁর তিনটি শিশুতোষ বই এসেছে অনন্য থেকে। এ ছাড়া শবমেহেরকে নিয়ে লেখা উপন্যাস টোপ, কয়েকজন মেয়ে এই উপন্যাসগুলো এসেছে মেলায়। পার্ল থেকে এসেছে মোস্তফা কামালের উপন্যাস মানবজমিন। ঐতিহ্য এনেছে আবদুল মান্নান সৈয়দের নজরুল জীবনী অন্যপ্রকাশ এনেছে সুমন্ত আসলামের যদি কখনো

প্রথমার স্টলে কথাশিল্পী আনিসুল হক তাঁর নতুন উপন্যাস এখানে থেমো না-তে স্বাক্ষর দিয়ে তুলে দিচ্ছিলেন পাঠকদের হাতে। শেখ আবদুল হাকিম অনূদিত ডগলাস ফ্রানৎজ ক্যাথেরিন কলিন্সের দ্য ম্যান ফ্রম পাকিস্তান: নিউক্লিয়ার স্মাগলার আবদুল কাদির খান, রকিব হাসানের পুরোনো টাওয়ার। উন্মুক্ত মঞ্চের পাশে মহুয়া গাছতলায় চেয়ার পেতে আলাপচারিতায় মেতে ছিলেন অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসেন, প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহারসহ অনেকে। তাঁরা বললেন, মেলার আকার সৌন্দর্য বেড়েছে প্রত্যাশা অনুসারে। পাঠকের উৎসাহও আছে, তবে প্রকাশনা সার্বিকভাবে এখনো মানসম্মত হয়ে উঠতে পারছে না। 

তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে কাল ৩৬৯টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। মোড়ক উন্মোচন মঞ্চেও ছিল প্রচুর ভিড়। কলি প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ফারজানা শিকদারের কবিতার বই একদিন নক্ষত্রেরও পতন হয়-এর মোড়ক উন্মোচন করা হলো সন্ধ্যায়। মেলার প্রাঙ্গণ থেকে টিএসসি হয়ে কলাভবন তখন আক্ষরিক অর্থেই একাকার হয়ে গেছে উৎসবমুখর বিশাল জনসমুদ্রে।