চট্টগ্রাম সিটিতে আ.লীগের মেয়র প্রার্থী হতে চান ১৯ জন

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

চট্টগ্রাম সিটিতে আওয়ামী লীগের পরবর্তী মেয়র প্রার্থী কে, তা আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার বৈঠকে নির্ধারিত হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।

চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হতে মোট ১৯ জন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ফরম জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল। গতকাল ফরম কিনেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, সাংসদ আফছারুল আমীনের ছোট ভাই এরশাদুল আমীন, আইনজীবী মনোয়ার হোসেন ও দীপক কুমার পালিত।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার (আজ) সন্ধ্যা ছয়টায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সেখানে মেয়র প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হবে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও ডাকা হয়েছে। তবে তাঁরা বৈঠকে থাকবেন না।

চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হওয়ার জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রাজধানীতে নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছেন। তৎপরতার পাশাপাশি একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। এতে মূল ধারার রাজনীতিবিদেরা মনোনয়নপ্রাপ্তির প্রতিযোগিতায় কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছেন। এই সুযোগটি নেওয়ার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ী কিংবা অরাজনৈতিক নেতারা। কারণ, যে ১৯ জন দলীয় ফরম কিনেছেন, তাঁদের মধ্যে রাজনীতিবিদ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করে দলীয় দুজন নেতা জানান, নৌকার ওপর ভর করে কেউ কেউ বৈতরণি পার হতে চাইছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ইতিহাসে এবার আওয়ামী লীগ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক মেয়র হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ কারণে একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে রাজনীতির ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু দলীয় সভাপতি সবার সম্পর্কে জানেন। তিনি ভেবেচিন্তে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।

দলীয় সূত্র জানায়, মূলধারার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান আ জ ম নাছির উদ্দীন ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম, খোরশেদ আলম ও আলতাফ হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম রয়েছেন। আলোচনায় আরও আছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মো. এমদাদুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে ও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য হেলাল উদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলামের ছেলে মুজিবুর রহমান।

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি বলয় রয়েছে। একটির নেতৃত্বে প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং অন্যটির নেতৃত্বে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে এই দুজনের ওপর নির্ভর করে প্রচারণা চালাতে হবে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতিবিদেরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। এই দায়বদ্ধতা থেকে জনগণের সেবা করার মানসিকতা তৈরি হয়। আমি সারা জীবন রাজনীতি করেছি। নির্বাচন করার সুযোগও পেয়েছিলাম। কিন্তু করা হয়নি। শেষ বয়সে আবার মনোনয়ন চেয়েছি, যাতে চট্টগ্রাম নগরকে সুন্দরভাবে সাজানো যায়।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হেলাল উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। আমি ফরম কিনেছি বলে জানিয়েছি। তিনি চাইলে নির্বাচন করব।’

মেয়র প্রার্থী হিসেবে একেক সময় একেকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ দলীয় সভাপতির আশীর্বাদ পেয়েছেন বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে নানা রকমের খবর বাজারে ছড়াচ্ছে। এবার মেয়র হতে অনেকে ফরম কিনেছেন। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ডে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। এর আগে যা প্রচার হচ্ছে সবই গুজব। আর কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা দলীয় সভাপতি ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না।

কাল রোববার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। মার্চের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত পারে। এর আগে ২০১৫ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলমকে পরাজিত করে মেয়র হন। যদিও নির্বাচনের দিন বেলা ১১টায় বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলম কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। মোহাম্মদ মনজুর আলম এবার আওয়ামী লীগের ফরম কিনেছেন। তিনি ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হয়েছিলেন।