খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সরকার থেকে কোনো সাড়া পাইনি: ফখরুল

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। ছবি: সাজিদ হোসেন
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। ছবি: সাজিদ হোসেন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। তাঁকে দুই বছর সাত দিন কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার তাঁর মুক্তি চেয়েছি, জামিন চেয়েছি এবং মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎ​সার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তাদের (সরকার) কাছ থেকে কোনো রকম সাড়া পাইনি।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছি​লের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় বেলা দুইটায় নয়াপল্টন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত মিছিলের কর্মসূচি ছিল। নেতারা অভিযোগ করেন, মিছিলে যোগ দিতে আসা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হকসহ অন্তত ২০ জনকে পুলিশ আটক করেছে।

মিছিলের অনুমতি না পেয়ে পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে দলটি।

সমাবেশে বিএন​পির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি ছিল বিক্ষোভ মিছিল। সেই কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। সকাল থেকেই এই অঞ্চলে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের প্রবেশে বাধা দিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার মনে করেছে এভাবে গ্রেপ্তার করে, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে, গুম করে জনগণের প্রাণের দাবি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে তারা দমিয়ে রাখবে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে এভাবে দমননীতি দিয়ে জনগণের ন্যায্য দাবিকে কখনো দমন করা যায় না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের জনগণের দাবিকে সম্মান করে মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে সরকার অবিলম্বে মুক্তি দেবে।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একটি মিথ্যা মামলায়, ফরমায়েশি রায়ে খালেদা জিয়া দুই বছর সাত দিন ধরে কারাবন্দী। আজ শুধু বেগম জিয়া কারাগারে নয়, পুরো দেশ আজ কারাগারে। এই সরকার লুটপাট করে দেশকে ফতুর করে দিয়েছে। একনায়ক শাসনের কারণে দেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারলে গণতন্ত্র মুক্ত হবে না, জনগণ তার অধিকার ফিরে পাবে না।’

স্থায়ী ​কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘এই সাহস, নেত্রীর প্রতি ভালোবাসাকে বুকে নিয়ে এগোতে হবে। গ্রেপ্তার করুক, জেলখানায় ভরুক, গুম করুক—এই প্রতিবাদ থামবে না। এই প্রতিবাদ চলতেই থাকবে। আগামী দিনে আরও কর্মসূচি আসবে। দেশনেত্রীকে এবার ইনশা আল্লাহ মুক্ত করে ছাড়ব।’

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আবদুল মঈন খান দাবি করেন, খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে যদি রাজপথে নেমে আসেন, তাহলে জনস্রোত নেমে আসবে। সে ভয়ে সরকার মুক্তির পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে বিএনপির স্থায়ী ​কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজ আমরা মায়ের মুক্তির জন্য সমবেত হয়েছি। মায়ের মুক্তির সংগ্রাম কেউ থামাতে পারে না। মায়ের মুক্তি বাংলাদেশের মুক্তি, মায়ের মুক্তি দেশের গণতন্ত্র, বাক্‌স্বাধীনতা আইনের শাসন ফিরে পাওয়ার মুক্তি। মাকে মুক্তি করে আমাদের জয়ী হতে হবে।’

জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘আজকের বিক্ষোভ মিছিলের জন্য আমরা পুলিশকে অবহিত করেছি। এটা বেআইনি কিছু নয়।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘বিএনপিকে বিক্ষোভ মিছিলে অনুমতি দিলে ঢাকা মহানগরীর বিল্ডিংগুলো কি ধসে যেত? বিদ্যুতের খুঁটিগুলো কি ভেঙে পড়ত? বুড়িগঙ্গা নদী কি পল্টন দিয়ে প্রবাহিত হতো? তাহলে কেন দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করতে দেওয়া হলো না?’

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবীব–উন–নবী খানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, যুবদলের সাইফুল আলম, সুলতান সালাহউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী প্রমুখ।