প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের একটা বিশেষ দায়িত্ব আছে: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ফাইল ছবি
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ফাইল ছবি

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘যারা প্রতিবন্ধী, তাদের প্রতি সমাজের একটা বিশেষ দায়িত্ব আছে। কিন্তু সেই দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা খুব সচেতন নই। সচেতন হলে তাদের কল্যাণে অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন গড়ে উঠত।’

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার দ্বাদশ বর্ষপূর্তি ও ব্রেইল প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে আজ শনিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এসব কথা বলেন। রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্পর্শ ফাউন্ডেশন।


অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘স্পর্শ বিশেষ করে ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশনায় দিকটায় জোর দিয়েছে। প্রতিবছরই ব্রেইলে কিছু না কিছু বই প্রকাশিত হচ্ছে। এবারও অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করি, এ রকম উদ্যোগ নিলে বড় কিছু একটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্পর্শের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কমনা করি। আজ এখান থেকে আমরা যে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি, সেটা আমাদের জীবনকে স্পর্শ করেছে। আমরা চেষ্টা করব যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেন প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু না কিছু করার।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে হচ্ছে। এই জাদুঘর এখনো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও মেলে ধরতে হবে এই বিশাল জনগোষ্ঠির কাছে। বিশেষ করে নবীন-নবীনাদের কাছে। নিশ্চয়ই আমরা এই আলোচনা করব এবং স্পর্শ ফাউন্ডেশনেরও সহায়তা নেব, যে কী করে এই জাদুঘরের দরজটা খুলে দেওয়া যায় দৃষ্টিজয়ীদের জন্য।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মুজিব বর্ষে যেমন সরকার বলেছে, সবখানে মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের একটি কর্ণার থাকা দরকার। তাঁরা যদি সত্যিকার অর্থে মুজিব বর্ষকে একটি অনুষ্ঠানসর্বস্ব বিষয়ে পরিণত করতে না চান, ...আমি অনুরোধ করব, মুজিব বর্ষে একটি বড় উপহার হোক, যেটি বঙ্গবন্ধু বেচে থাকলে সবচেয়ে খুশি হতেন সব গ্রন্থাগারে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ব্রেইল কর্নার হোক।’

স্বাগত বক্তব্যে স্পর্শ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট নাজিয়া জাবীন বলেন, ‘আজ স্পর্শের ১২ বছর পূর্তি ও ব্রেইল বইয়ের প্রকাশনা উৎসব। ২০০৮ সালে কাজ শুরু হয়। ২০০৯ সালে দেশে প্রথম ব্রেইলে ছড়ার বই প্রকাশ করে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। সাহিত্যচার্চার জন্য দেশে যেখানে একটিও ব্রেইল বই ছিল না, এ পর্যন্ত আমরা ৮২টি ব্রেইল নিয়ে যুক্ত হয়েছি বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। স্পর্শ বিশ্বাস করে, ব্রেইল আন্দোলন একটি মানবিক আন্দোলন। এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বাংলা একাডেমির কাছে বিশেষ অনুরোধ থাকবে, সব বড় স্টলে ব্রেইল বই বাধ্যতামুলক করে দিন।’


অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবার ১৫টি নতুন ব্রেইল পদ্ধতিতে বইয়ে প্রকাশ করেছে স্পর্শ। এর মধ্যে ড. আনিসুজ্জামান, মুনতাসীর মামুন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনোয়ারা সৈয়দ হক ও মোরশেদ শফিউল হাসানের বই রয়েছে। অনুষ্ঠানে স্পর্শের পক্ষ থেকে চারজনকে দৃষ্টিজয়ীকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। সাংস্কৃতিক অর্জনে ডালিয়া নওশিন, সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আশিকুর রহমান অমিত, পেশাগত সাফল্যে ফাহিমা খাতুন ও সমাজকর্মে সাফল্যে মোহাম্মদ আহসান হাবিবকে ওই সম্মাননা দেওয়া হয়।


জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে ব্রেইল পদ্ধতিতে এবার প্রকাশিত বই থেকে অংশবিশেষ তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। দৃষ্টিজয়ী তিন শিক্ষার্থীর মা নিজের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দৃষ্টিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।