১৭ বছর পর মাকে খুঁজে পেলেন ছেলে

১৭ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়ে আপ্লুত ছেলে। ছবি: প্রথম আলো
১৭ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়ে আপ্লুত ছেলে। ছবি: প্রথম আলো

মা বকুল বালার বয়স এখন ৮০ বছরের কাছাকাছি। ১৭ বছর আগে তিনি তাঁর ছোট মেয়ে আলো রানীকে (১৬) খুঁজতে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এত দিন পর আজ রোববার তাঁর বড় ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ হাওলাদার (৪৫) তাঁকে খুঁজে পেয়েছেন। পটুয়াখালী শহরের সবুজবাগ এলাকার তিতাস মোড়ের একটি ছাপড়ায় মাকে খুঁজে পান ছেলে। এ সময় আপ্লুত হয়ে পড়েন ছেলে।

বকুল বালার বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার তালবাড়ীয়া গ্রামে। দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে সংসার ছিল তাঁর। বড় মেয়ের বিয়ের পর ছোট মেয়ে আলো রানীকে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দেন। বিয়ের কিছুদিন পরই আলোকে বাপের বাড়ি ফেলে তাঁর স্বামী ভারতে পালিয়ে যান। এরপর স্বামীর খোঁজে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হন আলো। ১৭ বছর আগে একদিন মা মেয়েকে খুঁজতে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি।

বকুল বালার নাতি রিপন চন্দ্র হাওলাদার পটুয়াখালী সরকারি কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। পটুয়াখালী শহরের একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। গত শুক্রবার সকালে শহরের সবুজবাগ এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় বকুল বালাকে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি তাঁর বাবা ঠাকুর কৃষ্ণ হাওলাদারকে খবর দেন। এরপর আজ দুপুরে ঠাকুর কৃষ্ণ পটুয়াখালী গিয়ে হারিয়ে যাওয়া মাকে চিনতে পেরে গলা ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নাতি রিপন হাওলাদার বলেন, তাঁর ঠাকুমা যখন হারিয়ে যান, তখন তিনি খুব ছোট ছিলেন। তবে মা–বাবার কাছে ঠাকুমার শারীরিক বিবরণ শুনে এই বৃদ্ধকে তাঁর ঠাকুমার মতো মনে হয়। তখন তিনি বাবাকে খবর পাঠান।

বকুল বালার ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ বলেন, ‘আমার মা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। বোনকে খুঁজতে বের হয়ে মা নিখোঁজ হন। বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে খুঁজেছি। এখানকার লোকজনের আশ্রয়ে এবং তাদের দেওয়া খাবার খেয়ে মা এত দিন বেঁচে আছেন। আমরা তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’

দীর্ঘ ১৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাতের খবরে সবুজবাগ এলাকার লোকজন ভিড় জমাতে থাকেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, প্রায় চার বছর আগে বর্ষার দিনে এই বৃদ্ধ এখানে একটি ছাপরায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় এলাকার শারমীন আক্তার লাইজু নামের এক হোটেল ব্যবসায়ী তাঁকে আশ্রয় দেন। হোটেল থেকে বৃদ্ধকে খাবার দেন। এভাবে কয়েক দিন যাওয়া পর এলাকার কাউন্সিলর কাজল বরণ দাস বৃদ্ধর জন্য কাপড় ও কম্বলের ব্যবস্থা করেন।

কাজল বরণ দাস বলেন, ‘এই বৃদ্ধ এলাকায় সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কথা কম বলতেন। মনে হতো মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। আশপাশের বাসায় গিয়ে খাবার খেতেন। আমরা সবাই মিলে একটি ছাপরা ঘর তুলে দিয়ে সেখানে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করি। তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজন ফিরে পাওয়ায় আমরা খুব খুশি।’