গোলাপের রাজ্যে তামাকের আগ্রাসন

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলীতে গোলাপের জায়গায় এখন তামাকের চাষ হচ্ছে। বরইতলী ইউনিয়নের মাইজপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায়।  প্রথম আলো
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলীতে গোলাপের জায়গায় এখন তামাকের চাষ হচ্ছে। বরইতলী ইউনিয়নের মাইজপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায়। প্রথম আলো

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী নামটি সারা দেশে পরিচিত গোলাপের গ্রাম হিসেবে। সেই পরিচয় এখন ম্লান হতে চলেছে। গোলাপের রাজ্যে চলছে এখন তামাকের আগ্রাসন। বরইতলী গ্রামে গোলাপ আর তামাকের অবস্থান পাশাপাশি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভার মধ্যে শুধু বরইতলী ইউনিয়নে গোলাপের চাষ হয়। এই ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে বর্তমানে ৫০ একর জমিতে গোলাপের চাষ হচ্ছে। তামাকের চাষ হচ্ছে পাঁচ একর জমিতে। গোলাপ চাষের সঙ্গে অন্তত ৩০০ জন চাষি ও শ্রমিক জড়িত আছেন। 

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছর উপজেলায় তামাকের চাষ কমেছে বলে দাবি করেছেন। তবে তাঁর বক্তব্যের প্রতিফলন পাওয়া যায়নি বরইতলী এলাকায় গিয়ে। সেখানে গত বছরের চেয়ে এবার তামাকের চাষ বেশি দেখা গেছে। স্থানীয় চাষিরা বলছেন, বাজারে কাগজের ফুল ও চীনা ফুলের কদর বেড়ে যাওয়ায় আসল গোলাপের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে প্রতিবছর লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। অন্যদিকে তামাকে গোলাপ চাষের চেয়ে লাভ বেশি। এ কারণে চাষিরা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। 

তামাকচাষি ছৈয়দুল আলম বলেন, ‘১০ বছর ফুলের চাষ করেছি। শেষের তিন বছর ফুল চাষ করে সুবিধা করতে পারিনি। এ কারণে এখন তামাকের চাষ করছি। ছৈয়দুল চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে তামাকের চাষ করেছেন।’ 

ফুলচাষিরা জানিয়েছেন, বরইতলী থেকে চাষিরা সরাসরি চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়, ঢাকার শাহবাগ ও সাভার এবং কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন আড়তে গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস ফুল সরবরাহ করেন। এবার আড়তদারদের কাছে প্রতিটি গোলাপ সাড়ে আট টাকা ও গ্ল্যাডিওলাস ১১-১২ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। 

উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের দরগাপাড়া, মাইজপাড়া, আলমনগর, হিন্দুপাড়া, বড়পাড়া, ওপরঘোনা, খয়রাতিপাড়া এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন চাষিরা। ওই এলাকার জমিগুলোতে গ্ল্যাডিওলাস, গোলাপ, চায়না গাঁদা, হলুদ গাঁদা, জারবেরা, জিপসিসহ নানান প্রজাতির ফুল ফুটেছে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইজপাড়া এলাকায় গোলাপ বাগানের পাশেই তামাকের চাষ করা হয়েছে। এই গোলাপ বাগানটি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের। তিনি বলেন, তাঁর বাগানের চারপাশে গত দুই বছর আগেও গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষ হতো। এখন শুধু তাঁর বাগানটি ছাড়া চারপাশের সব জমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে। বিষয়টি এখন এমন যে, গোলাপের রাজ্য যেন তামাক দখল করে নিয়েছে। 

ফুল বাগানের শ্রমিক বেলাল উদ্দিন বলেন, ভালোবাসা দিবস, পয়লা বৈশাখ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও  বর্ষবরণের রাতে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এসব দিবসকে ঘিরে অগ্রিম প্রস্তুতিও থাকে ফুলচাষিদের। তবে এ বছর গত বছরের তুলনায় দিবসগুলোতে ফুল বিক্রি কম হয়েছে।

বরইতলী ফুল বাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মইনুল ইসলাম বলেন, ৩৫ বছর ধরে বরইতলী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফুল যাচ্ছে। তবে প্রতিবছর ফুলের চাষ কমছে। এসব এলাকায় সবজি ও তামাকের চাষ বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাজারে প্লাস্টিকের ফুলের কদর  বাড়ছে। সামাজিক অনুষ্ঠানে এখন কৃত্রিম ফুল ব্যবহার করছে।