নবাব আলীর পাশে তরুণেরা

নবাব আলী ও তাঁর প্রতিবন্ধী স্ত্রী সুফিয়া খাতুন
নবাব আলী ও তাঁর প্রতিবন্ধী স্ত্রী সুফিয়া খাতুন

দৃষ্টি ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী স্ত্রীকে নিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মধ্য মরিচপুরান গ্রামে এক বৃদ্ধের বসবাস। স্ত্রী চোখে দেখতে ও কানে শুনতে না পারায় বৃদ্ধ স্বামীকেই পরিবারের সব কাজ সামলাতে হয়। বাড়িতে নলকূপ না থাকায় তাঁকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে ৩০০ মিটার দূরে অন্যের বাড়ি যেতে হতো। অসহায় পরিবারটির এ কষ্টের কথা ভেবে এলাকার তরুণদের উদ্যোগে একটি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

এ দম্পতি হলেন মো. নবাব আলী (৭০) ও তাঁর প্রতিবন্ধী স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (৬৬)। তাঁদের দুই মেয়ে আছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। দুই মেয়ের সঙ্গে মা–বাবার তেমন যোগাযোগ নেই।

নবাব আলী দিনমজুরি করতেন। বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আর দিনমজুরি করতে পারেন না। বর্তমানে তিনি মরিচপুরান চৌরাস্তা বাজারের বিভিন্ন দোকানে ঝাড় দিয়ে এবং অন্যের ছোটখাটো কাজ করে যা পান, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়। তাঁর প্রতিবন্ধী স্ত্রীও বয়স বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতেই দিন পার করেন। গৃহস্থালিসহ বাড়ির যাবতীয় কাজ তাঁর স্বামী একাই করেন। রান্নাবান্নার পাশাপাশি স্ত্রীর গোসল করানো, খাওয়ানো, কাপড় ধুয়ে দেওয়াসহ সংসারের যাবতীয় কাজ তিনি করেন।

শুধু একটি ছোট টিনের ঘর ছাড়া নবাব আলীর কোনো সম্পত্তি নেই। সম্প্রতি এ দম্পতির জন্য টিনের ঘরটি করে দেন মরিচপুরান গ্রামের মো. ফরহাদ আলী। বাড়ির পাশের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে খাওয়ার পানি আনতেন নবাব আলী। প্রায় ছয় মাস ধরে তাঁকে পানি নিতে বাধা দেন সেই আত্মীয়। নিরুপায় হয়ে নবাব আলী প্রতিদিন অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে আরেকটি বাড়ি থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতেন।

বিষয়টি এলাকার তরুণদের নাড়া দেয়। এলাকার শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম পরিবারটির সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। আরিফুলসহ ২০ তরুণের প্রচেষ্টায় অসহায় পরিবারটিকে একটি নলকূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নবাব আলীর কষ্টের কথা জেনে এলাকাবাসী যাঁর যাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী ১০–২০ টাকা দেন। এতে দেড় হাজার টাকা সংগৃহীত হয়। এ ছাড়া ফরহাদ আলী দুই হাজার টাকা দেন। একটি নলকূপ, ফিল্টার ও তিনটি পাইপ কিনতে ২ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয় হয়। নলকূপ স্থাপনে শ্রমিকদের দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। বাকি টাকা নবাব আলীর হাতে তুলে দেন তরুণেরা।

নলকূপ পেয়ে নবাব আলী আনন্দে আত্মহারা। তিনি বলেন, প্রতিদিন দূর থেকে অন্যের বাড়ি গিয়ে পানি আনতে কষ্ট হতো। এখন তাঁর শরীরে আগের মতো জোরও নেই। কল পেয়ে খুব উপকার হলো। তরুণদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

শিক্ষার্থী আরিফুল বলেন, নবাব আলী নিজেও অসুস্থ, তাঁর প্রতিবন্ধী স্ত্রীও অসুস্থ। পাশের বাড়ি থেকে পানি আনতে বাধা দেওয়ায় অনেক কষ্ট করে দূরে অন্যের বাড়ি থেকে পানি আনতেন। এটা দেখলে যেকোনো মানুষেরই কষ্ট লাগবে। তাই তাঁকে একটি নলকূপের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাঁরা। এতে এলাকার অনেকে সহযোগিতা করেছেন।