দেশে এলে বিচার হবে শামীমার

আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়া শামীমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত
আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়া শামীমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া শামীমা বেগম বাংলাদেশে এলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠাবে পুলিশ। সন্ত্রাস দমন আইনে তাঁর বিচার হবে, যদিও এখন পর্যন্ত তাঁকে নাগরিকত্ব না দেওয়া ও প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।

যুক্তরাজ্যের আদালত ৭ ফেব্রুয়ারি শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেন। এর এক দিন পরই শামীমার আইনজীবীরা বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের হাতে আর একটি আপিলের সুযোগ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শামীমা বেগম ইস্যুতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কী করবে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শামীমার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সিটিটিসি তার অবস্থানের কথা জানিয়েছে।

সিটিটিসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের দ্য স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে শামীমা বেগমের নাগরিকত্বের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর আইনজীবীরা তাঁদের (সিটিটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আইনজীবীদের হাতে এখন আর একটি আপিলের সুযোগ আছে। সেটি বাতিল হলে আইনজীবীরা শামীমার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চাইতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শামীমার ভাগ্যে কী ঘটতে পারে জানতে চেয়ে ই–মেইলে যোগাযোগ করেছেন আইনজীবীরা।

শামীমা বেগম বর্তমানে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এসডিএফ) পরিচালিত আল রোজ নামের একটি আশ্রয়শিবিরে রয়েছেন। ২০১৫ সালে ১৫ বছর বয়সে দুই বান্ধবীসহ শামীমা যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিরিয়ায় গিয়ে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেন। সিরিয়ায় অবস্থানের সময়ই তিনটি সন্তানের জন্ম দেন শামীমা। তিনজনই মারা যায়।

এর মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আইএসের সঙ্গে জড়িত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমাকে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না। শামীমার মা–বাবা ব্রিটিশ নাগরিক। শুধু শামীমা নন, জঙ্গি–সংশ্লিষ্ট কাউকেই এ দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

তবে শামীমা বেগম ইস্যুতে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা বলছেন, ২০০৮ সালের ১৮ মার্চের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব আছে এমন বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রয়োজন নেই। তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাংলাদেশের নাগরিক।

অন্যদিকে সিটিটিসি একটি চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, শামীমা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার জন্য চরম হুমকি। তাঁকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা থেকে বিরত রাখা অনিবার্য। তারপরও যদি তিনি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন এবং তাঁকে ফেরত পাঠানো সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো যেতে পারে।

 গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি সেক্রেটারি অব স্টেট সাজিদ জাভিদ যুক্তরাজ্যে শামীমার পরিবারের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে শামীমা যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি—এ যুক্তিতে তাঁর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এমনকি গত ১৩ জুন শামীমা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে যুক্তরাজ্যে ফেরার আবেদন জানান। সেটিও গ্রহণ করেনি দেশটির সরকার।

যুক্তরাজ্যের আদালতে যা হলো

যুক্তরাজ্যের আপিল আদালত তাঁদের রায়ে বলেছেন, শামীমার আপিল বিবেচনায় তাঁরা তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়েছিলেন—এ সিদ্ধান্তের ফলে শামীমা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বেন কি না, সেক্রেটারি অব স্টেটের সিদ্ধান্তের কারণে দেশের সীমানার বাইরে মানবাধিকারবিষয়ক নীতি ভঙ্গ হবে কি না কিংবা তিনি (শামীমা) মৃত্যুঝুঁকি বা অমানবিক কোনো পরিস্থিতিতে গিয়ে পড়বেন কি না এবং যদি তা হয় তিনি সিরিয়ায় থেকে ন্যায্য ও কার্যকরভাবে আপিল পরিচালনা করতে পারবেন কি না।

সেক্রেটারি অব স্টেটের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, শামীমার জন্মের সময় তাঁর মা–বাবা দুজনেই বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। এখনো তাঁর বাবা বাংলাদেশের নাগরিক। শামীমা বেগমের বাবা সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে। ১৯৯৩ সালে তিনি অনির্দিষ্টকাল যুক্তরাজ্যে থাকার আবেদন করেন। অন্যদিকে ১৯৬৪ সালে সিলেটে জন্ম নেন শামীমার মা। তিনি যুক্তরাজ্যে যান ১৯৮১ সালে বিয়ের বছর দেড়েক পর। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পান ২০১১ সালে। শামীমার জন্ম ১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট।

এদিকে ২০১৯ সাল থেকে কখনোই শামীমা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না চাইলেও এখন তাঁর পরিবার যুক্তরাজ্যের বিকল্প খুঁজছেন। শামীমার বাবা আহমদ আলী এখন জানার চেষ্টা করছেন, বাংলাদেশে এলে মেয়ের কঠোর সাজা হবে কি না।