করোনার কারণে চীনের বিকল্প না খোঁজার অনুরোধ রাষ্ট্রদূতের

ডিকাব টকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন
ডিকাব টকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনের বিকল্প না খুঁজতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

আজ সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ডিকাব টকে এই আহ্বান জানান চীনা রাষ্ট্রদূত। ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।

লি জিমিং বলেন, পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের (চীনের বিকল্প) পদক্ষেপ ব্যয়বহুল, অসম্ভব ও অপ্রয়োজনীয়।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সারা বিশ্ব এখন এক অভিন্ন শত্রুকে মোকাবিলা করছে। এটা ঠিক যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্য দিয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ জন্য কি চীনকে দায়ী করা যায়? মোটেই না।’

লি জিমিং বলেন, ‘রোগের বিস্তার চীনের উহানে, এটা সত্যি। কিন্তু এই রোগের উৎস যে চীনে, সেটা তো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তারপরও পশ্চিমা গণমাধ্যম এই রোগকে মেড ইন চায়না বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে তাঁর দেশের অর্থায়নে যে সব বৃহদায়তন প্রকল্প হচ্ছে তার কয়েকটি কাজ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।

লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চীনের প্রায় ১০ হাজার নাগরিক অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার জন কাজ করেন বিভিন্ন প্রকল্পে। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত এক হাজার লোককে আপাতত বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের বাংলাদেশে ফিরে না আসার দরুন কয়েকটি প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হতে পারে।

এ মুহূর্তে উহানে অবস্থানরত ১৭২ বাংলাদেশির ফেরার প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এদের ফিরে আসার বিষয়ে চীনের অনুমোদন তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারিগরি কারণে তাদের বাংলাদেশে আসা পিছিয়েছে। ৩১২ জনকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে দেশে আনা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ বিমান তাদের ফ্লাইট আর চীনে পাঠাতে চাচ্ছে না। আমরা এখন বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মাধ্যমে তাদের ঢাকায় আনার চেষ্টা করছি। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।’

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের কী করা উচিত প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীনা দূতাবাসের একজন কর্মী ১৪ দিন আগে ঢাকায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাকে আলাদা করে ফেলি । ওই কর্মকর্তা গতকাল (রোববার) কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশিদের (যারা বিদেশ থেকে ঢাকায় আসেন) সবার ক্ষেত্রে এটা করা হয় না।’ তিনি এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।

চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ৫০০টি স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপকরণ (কিট) দিচ্ছে চীন। আগামীকাল মঙ্গলবার কিটগুলো বাংলাদেশে পৌঁছাবে।

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭০ জন মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত রোগীর মোট সংখ্যা ৭০ হাজার ৫৪৮ জন। চীনের বাইরে অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। এসব দেশে ছয় শতাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে। ফিলিপাইন, হংকং, তাইওয়ান, জাপান ও ফ্রান্সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজন মারা গেছেন।

দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রত্যাশা

চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, তাঁর দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধ এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন চায়।
মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ই চীনের ভালো বন্ধু উল্লেখ করে লি জিমিং বলেন, পশ্চিমাদের চাপের পরিবর্তে দুই দেশের মধ্যে আরও আলোচনা চায় চীন। মিয়ানমার অনেক বছর ধরেই পশ্চিমাদের চাপে ছিল। দেশটি এখন আর ওই চাপ নিতে চায় না।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।