কুয়েতে মানব পাচার: দুই মন্ত্রীর দুই বক্তব্য, প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ

কুয়েতে মানব পাচারের সঙ্গে এক সাংসদের যুক্ততার বিষয়ে দুই মন্ত্রী দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন কুয়েতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবরকে ‘ফেক নিউজ’ বলেছেন। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও অনলাইন পত্রিকা আরব টাইমস গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একজন সাংসদসহ তিন সদস্যের একটি মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এই সাংসদ হলেন লক্ষ্মীপুর-২ থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত শহিদ ইসলাম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেছে, কুয়েতে মানব পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন নাগরিকের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস ঢাকায় এখনো কিছু জানায়নি। গতকাল রোববার এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শুনেছি যে এটা ফেক নিউজ। আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

আমাদের মিশন ওখান থেকে কোনো খবর দেয়নি। আমরা এখনো কিছু জানি না। এটা বোধ হয় কোনো একটি পত্রিকায় বের হয়েছিল। পরে ওই পত্রিকাই বলেছে এর সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ আছে।’

একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের অনুরোধ জানাবেন বলেও জানান।

সাংসদের প্রতিবাদ
গতকাল প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘কুয়েতে মানব পাচারে যুক্ত বাংলাদেশের সাংসদ’ শিরোনামের প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম।

প্রতিবাদপত্রে সাংসদ বলেন, ‘সংসদ অধিবেশন চলমান থাকায় আমি দেশে এসেছি। আমি যেহেতু কুয়েতে ব্যবসা করি, তাই সংসদ সচিবালয় থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে কুয়েতে যাই। ছুটির মেয়াদ অনুযায়ী আমি দেশে এসেছি। অন্য কোনো কারণ বা হঠাৎ দেশে আসার বিষয়টি সত্য নয়। আমি আদৌ মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত নই। এমনকি আমি জনশক্তির ব্যবসাও করি না।’

শহিদ ইসলাম দাবি করেন, ২০ হাজার বাংলাদেশিকে কুয়েতে পাঠিয়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় করার বিষয়টি ভিত্তিহীন। তাঁর কোনো জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স বা ব্যবসা নেই। তিনি বলেন, কুয়েতের যে দুটি পত্রিকার বরাত দেওয়া হয়েছে, সেই সংবাদগুলোতে তাঁর সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য নেই।

সাংসদ শহিদ ইসলাম বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে কুয়েতে ব্যবসা করেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিহিংসার কারণে অনেকে বানোয়াট তথ্য দিয়ে এসব সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

প্রতিবেদকের বক্তব্য
কুয়েতের আল কাবাস ও আরব টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। মানব পাচার ও ভিসা-বাণিজ্যের ওই চক্রে সাংসদের যুক্ততার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা ও কুয়েতের কূটনৈতিক সূত্রগুলোতে যোগাযোগ করা হয়। ওই সূত্রগুলো খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সাংসদের দেশে আসা এবং মানব পাচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয়ের বিষয়গুলো কুয়েতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে সাংসদের বক্তব্য যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।