মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ নির্ধারিত সীমার নিচে: বিটিআরসি

মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ নিয়ে আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অ্যামটব আলোচনা সভার আয়োজন করে। ছবি: প্রথম আলো
মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ নিয়ে আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অ্যামটব আলোচনা সভার আয়োজন করে। ছবি: প্রথম আলো

দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ বা রেডিয়েশনের মাত্রা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দাবি করেছে, পরীক্ষায় মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন অধ্যাপকও বিষয়টি সমর্থন করে জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ সোমবার ‘টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদণ্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিকিরণের মাত্রা নিয়ে পরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে বিটিআরসি। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির পক্ষ থেকে পরীক্ষার ফলাফলের পাশাপাশি বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থার গবেষণার বরাত দেওয়া হয়। বিটিআরসির স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) বিভাগের কমিশনার মো. আমিনুল হাসান বলেন, টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মানদণ্ডের অনেক কম। বিকিরণ থাকবেই। কারণ, এটা ছাড়া টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি সম্ভব নয়। কথা হলো, সেটি ক্ষতিকর কি না। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিকিরণের মাত্রা নিয়ে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের উপপরিচালক শামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, বিকিরণ পরিমাণের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ছয়টি বিভাগে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। সব কটি পরীক্ষায় বিকিরণ মাত্রার চেয়ে অনেক কম পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেন, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রোটেকশনের (আইসিএনআইআরপি) পক্ষ থেকে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ম্যাগনেটিক ফিল্ডস (ইএমএফ) রেডিয়েশনে যে মাত্রায় ক্ষতিকর প্রভাব পাওয়া গেছে, তার ৫০ ভাগের এক ভাগকে নিরাপদ সীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে নিরাপদ সীমারও অনেক কম মাত্রায় বিকিরণ পাওয়া যায়।

শামসুজ্জোহা উল্লেখ করেন, বিকিরণ দুই ধরনের। আয়োনাইজিং ও নন-আয়োনাইজিং। এর মধ্যে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রে, গামা-রে কিংবা এক্স-রে। এগুলো শরীরের মধ্যে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন নন-আয়োনাইজিং। মোবাইল টাওয়ারের যন্ত্রপাতির ইএমএফ রেডিয়েশন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে। সে অনুযায়ী তৈরি করে সারা বিশ্বে সরবরাহ করা হয়।

জরিপটি হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সুন্দরবন, ফেনী, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ইত্যাদি এলাকায়। ৭০টি বিটিএসে জরিপ চালানো হয়। শামসুজ্জোহা বলেন, মোবাইল টাওয়ারগুলো যেহেতু একই প্রযুক্তির, সেহেতু সব ক্ষেত্রেই ফলাফল একই রকম হবে। তিনি নিজের উপস্থাপনায় মোবাইল টাওয়ারে পাখির বাসা এবং টাওয়ারের পাশে ছাদকৃষির ছবিও তুলে ধরেন।

বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, একটু জ্ঞান অর্জন করতে হবে, একটু জানতে হবে। মানুষের শরীরে এখন সেন্সর যুক্ত করা হচ্ছে। সেখানেও বিকিরণ হয়। ক্ষতিকর হলে সেটা করা হতো না। তিনি বলেন, বিকিরণ নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা দূর করা উচিত। বিটিআরসি বিকিরণের মাত্রা আগে মাপলে আরও ভালো হতো।

অ্যামটবের মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেন, মুঠোফোন, টিভির রিমোট, ল্যাপটপসহ অনেক কিছু থেকে বিকিরণ হয়। সবই কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাহলে এগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যবহার করা হয় কেন?

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হাইকোর্ট গত বছরের ২৫ এপ্রিল মোবাইল টাওয়ারের নিঃসৃত বিকিরণ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা করতে বলেছিলেন। বিটিআরসি বলছে, এ পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন জানতে চান, জনমনে বিকিরণ নিয়ে নেতিবাচক ধারণার কারণে কী সমস্যা হচ্ছে। জবাবে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে, এটি আসলেই ক্ষতিকর কি না।

টাওয়ার নিয়ে যাঁরা ঝুঁকির কথা বলেন, তাঁদের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি কেন, জানতে চাইলে বিটিআরসির কমিশনার আমিনুল হাসান বলেন, তাঁদের নিয়ে এ ধরনের আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে ভালো হবে।