'স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গিয়ে সংকোচে ভোগেন নারীরা'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে। ছবি: প্রথম আলো

স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গিয়ে সংকোচে ভোগেন নারীরা। দোকানিরা ন্যাপকিন এমনভাবে কাগজে মুড়িয়ে দেন, যাতে সেটি দেখা না যায়। কারণ, অনেকেই এটিকে গোপনীয় বিষয় মনে করেন। এটা ঠিক নয়। নারীদের পিরিয়ড যেমন স্বাভাবিক, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারও স্বাভাবিক। বরং এখনো অনেক অঞ্চলে নারীরা ন্যাপকিন ব্যবহার না করে অস্বাস্থ্যকর কাপড় বা অন্য জিনিসপত্র ব্যবহার করেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন নারীরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন এস এম সালামত উল্যা ভূঁইয়া এসব কথা বলেন।

ক্যাম্পাসের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী তৌসিফ আহমেদ গত বছরের অক্টোবরে অংশ নেন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এলজির ‘অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম’ প্রতিযোগিতায়। এতে জয়ী হয়ে তিনি এলজির কাছ থেকে চার লাখ টাকা অনুদান পান। এ টাকা থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন বসিয়েছেন।
মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ জাভেদ হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিশেষ অতিথি ছিলেন এলজি ইলেকট্রনিকস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডি কে সান। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী।

এতে ডি কে সান বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে এলজি গর্ববোধ করছে। ভবিষতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও নতুন নতুন প্রকল্পে অংশ নেবে এলজি। আর স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে বিষয়টিকে গ্রহণ করতে হবে।

ভেন্ডিং মেশিন যেখানে পাওয়া যাবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদ ও একটি আবাসিক হলের অন্তত আট হাজার ছাত্রী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের এ সুযোগ পাবেন। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউট এবং শেখ হাসিনা হলে এ মেশিন বসানো হয়েছে। ছাত্রীরা মেশিনে পাঁচ টাকার কয়েন ঢুকিয়ে ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে পারবেন।

প্রকল্পটির উদ্যোক্তা তৌসিফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নারীরা ভেন্ডিং মেশিনের সাহায্যে ন্যাপকিন সংগ্রহ করছেন। বিষয়টি জানার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়েও মেশিন বসানোর তাড়না অনুভব করি। কারণ, ক্যাম্পাসের অনুষদ ও হলগুলোর আশপাশে স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়া যায় না। ফলে ছাত্রীরা নানা সময়ে ভোগান্তিতে পড়েন। এখন মাত্র পাঁচ টাকার একটি কয়েন দিয়ে ন্যাপকিন পাওয়া যাবে।’

তৌসিফ আহমেদ বলেন, ‘মেশিনে ১০০টি প্যাড থাকবে। সহজেই ছাত্রীরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন। অবশ্য আমাদের একটি টিম থাকবে। যদি ছাত্রীরা কোনো সমস্যায় পড়েন, তবে টিম তাঁদের সাহায্য করবে। পাশাপাশি কয়েনের মাধ্যমে কীভাবে প্যাড সংগ্রহ করা যাবে, তা ভিডিও করে ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া হবে।’

তৌসিফ বলেন, ছাত্রীদের মধ্যে এটি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে উদ্বোধনের প্রথম দুই সপ্তাহ বিনা মূল্যে প্যাড সংগ্রহ করা যাবে। এরপর থেকে নির্দিষ্ট দামেই সংগ্রহ করতে হবে। আর ভেন্ডিং মেশিনে সরবরাহকৃত প্যাডগুলো অত্যন্ত উন্নত মানের, যা সেনোরা ব্র্যান্ডের আলট্রা থিন প্যাড। তবে ছাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে অন্য প্যাডও রাখা হতে পারে বলে জানান তৌসিফ আহমেদ। মেশিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল কাজ করবে। তারা মূলত প্যাড রিফিলের কাজটি করবে।

ছাত্রীদের ভাষ্য
মেশিন বসানোর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রীরা। নুসরাত জাহান ও সাদিয়া জাহান নামের দুই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, পিরিয়ডের সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের ঝামেলা পোহাতে হয়। অনুষদ ও হলের আশপাশে কোনো দোকান নেই। কিন্তু এখন স্বল্পমূল্যে ন্যাপকিন পাওয়া যাবে। ভোগান্তি এড়ানো যাবে।