ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রাহকের জন্য নির্যাতন, গণশুনানিতে মূল্য নির্ধারণের দাবি টিআইবির
ঢাকা ওয়াসার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক, গ্রাহকের ওপর নির্যাতনমূলক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো মূল্যবৃদ্ধির এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞসহ গণশুনানির মাধ্যমে ওয়াসা আইন ও সেবার মান, বিশেষ করে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ও গুণগত মান নিশ্চিত করা সাপেক্ষে যৌক্তিক ও সহনীয় মাত্রায় মূল্যবৃদ্ধির আহ্বান সংস্থাটির।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন। পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের অজুহাতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে পানির দাম বাড়াতে চায় ঢাকা ওয়াসা।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহক পর্যায়ে ৩৭ দশমিক ০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা (সার্বিকভাবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি) নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির বিধানের সঙ্গে এ প্রস্তাব সাংঘর্ষিক। প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়ালে তা ইতিমধ্যেই ওয়াসা কর্তৃক ন্যায্য পরিমাণে পানি সরবরাহ, বিশেষ করে পানির গুণগত মান নিশ্চিতে ব্যর্থতার কারণে হতাশ নগরবাসীর জন্য অধিকতর নির্যাতন ও বিড়ম্বনার কারণ হবে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর অন্যায্য চাপ আরও বাড়বে। উন্নয়ন ব্যয় বহনের নামে সেবার মান উন্নত ও পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিত না করে মূল্যবৃদ্ধির এ অন্যায্য প্রস্তাব ঢাকা ওয়াসার একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ। যে পানি ওয়াসার শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেরাই পান করতে নিরাপদ বোধ করেন না, তার মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে ওয়াসার সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা ওয়াসা নিয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত টিআইবির গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা ওয়াসার অধীনে জরিপে অন্তর্ভুক্ত ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ সেবাগ্রহীতা চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না, ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতার কাছে সরবরাহকৃত পানি অপরিষ্কার এবং ৪১ দশমিক ৪ শতাংশের কাছে সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধযুক্ত। ওয়াসার সেবার মান ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সার্বিকভাবে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতাই অসন্তুষ্ট। তাই সেবাগ্রহীতাদের মতামত না নিয়ে এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও সিস্টেম লস নিরসনে সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা ছাড়াই একতরফাভাবে পানির মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব গ্রাহকের ওপর অন্যায্য বোঝা চাপিয়ে দেবে, যা অগ্রহণযোগ্য।
বিবৃতিতে ওয়াসা আইনে পানির দাম নির্ধারণের আগে বিশেষজ্ঞসহ সেবাগ্রহীতাদের মতামত গ্রহণের জন্য গণশুনানির বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করে পানি ও পয়োনিষ্কাশন সেবার দাম নির্ধারণে স্বতন্ত্র রেগুলেটরি কাঠামো গঠন এবং ওয়াসা বোর্ডের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠনের আহ্বান জানায় টিআইবি।