নতুন বইয়ের সঙ্গে বাড়ছে পাঠকও

‘আমাদের কথা তো লিখবেন না!’
বললেন তিনি।

তার এক ইউনিটের স্টলের সামনে একজন ক্রেতাও নেই। সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন,‘মেলা বড় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গরিব প্রকাশকদের বই সেভাবে বিক্রি হয় না।’
তারপর নিজেই ওপর-নিচ মাথা দুলিয়ে বললেন, ‘পুঁজিবাদী সমাজে এটাই তো হবার কথা! কিন্তু আমি বাঁচব কী করে?’

কথাটা মনে ধরল। খোঁজ নিলাম আরও কয়েকটি এক ইউনিটের স্টলে। কথা বললাম আরও তিনজন প্রকাশক বা কর্মকর্তার সঙ্গে। কমবেশি একই কথা বললেন তাঁরা। অর্থাৎ এক ইউনিটের স্টলগুলোতে বেচাকেনা কম।

নাম প্রকাশ করব কি না, সে কথা বলায় তাঁরা একই উত্তর দিলেন। বললেন, ‘সে ক্ষেত্রে দু-একটা বই যা-ও বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো বিক্রি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

নাম প্রকাশ করব না এই শর্তে বড় দুটি প্যাভিলিয়নে গিয়ে ছোট স্টলের দুঃখের কথা জানালে তারাও স্বীকার করে নিল, প্রতিযোগিতার যুগে ভালো বই, বেশি বই বিক্রি করতে না পারলে এবং প্রচার ঠিকভাবে চালাতে না পারলে বইমেলায় বই বিক্রি করা কঠিন। অর্থাৎ ‘প্রচারে প্রসার’ বাক্যটি খুবই শক্তিশালী এখনো।

আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনির সঙ্গে কথা হলে তিনি বললেন, ‘কাল আমাকে নিয়ে নিউজ করলে বলতাম, এ বছর মেলায় আমি ১০০ বই বের করেছি। আজ বলতে হবে ১০১টি। এর মধ্যে অর্ধেক বই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে।’ তিনি জোর দিয়ে বললেন, ‘এই বইগুলোর পাশাপাশি হুমায়ুন আজাদের লেখা বইগুলো চলছে ভালো।’

সংবেদ প্রকাশনীর সামনে লেখকদের মেলা বসেছে যেন। তখন লোপা মমতাজের লেখা ইতিহাসের ফুটনোট: দ্বিরালাপে সমাজ সংস্কৃতি সাহিত্য ও রাজনীতি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন চলছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফারুক ওয়াসিফ, মাহবুব আজিজ, মাসুম রেজা, আলফ্রেড খোকন, জোবাইদা নাসরীন কনা, শামস আল মমিন, আহমাদ মাযহার, আবিদ আজমসহ অনেকেই।

গতকাল প্রথমা প্রকাশন চারটি নতুন বই এনেছে। ড. কামাল হোসেনের বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও ন্যায়ের সন্ধানে, আব্দুল কাইয়ুমের গণিত আর গণিত, সাগুফতা শারমীন তানিয়ার দ্বিতীয় ভ্রান্তিপাশ ও আনিসুল হকের গুড্ডুবুড়া যেভাবে ঢাকাকে বাঁচিয়েছিল। বরাবরের মতোই প্যাভিলিয়নটিতে ছিল ক্রেতা–দর্শনার্থীর ভিড়। অন্যপ্রকাশ, তক্ষশীলা, সময় প্রকাশন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, পুঁথিনিলয়সহ অনেক প্যাভিলিয়নে ছিল ভিড়।

নতুন বইয়ের পাশাপাশি নতুন পাঠকও বাড়ছে প্রতিদিন। মেলার শিশু চত্বরটিও ছিল শিশুদের দখলে। 

মেলায় প্রথমা প্রকাশন এনেছে কাজী জাওয়াদ অনূদিত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কাজুও ইশিগুরোর বিনোদনের এক শিল্পী। বাংলা একাডেমি এনেছে অনুপম হায়াতের বঙ্গবন্ধু ও চলচ্চিত্র।