একটি কাঠের শহীদ মিনারের গল্প

দীঘিনালার কবাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৈরি অস্থায়ী কাঠের শহীদ মিনারে রং করছে শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।  প্রথম আলো
দীঘিনালার কবাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৈরি অস্থায়ী কাঠের শহীদ মিনারে রং করছে শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। প্রথম আলো

বিদ্যালয়ে ফেব্রুয়ারি মাস এলেই তোড়জোড় শুরু হয়। ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কাঠের শহীদ মিনারে পড়ে নতুন রঙের আস্তর। মেরামত করা হয় মিনারের ক্ষয়ে যাওয়া অংশ। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ১ নম্বর কবাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় এভাবেই কাঠের শহীদ মিনার গড়ে নিয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

গত মঙ্গলবার কবাখালী বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে আমগাছের নিচে কাঠের তৈরি শহীদ মিনারে রং করছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম বদিউজ্জামান বিষয়টি তদারকি করছেন। বিদ্যালয়টিতে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৩১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি তারা সবাই বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ফুল দেবে শহীদ মিনারে।

জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এ কে এম বদিউজ্জামান বলেন, ‘যে ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে জব্বার, রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে নিজের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। সে কারণে আজ আমরা এই ভাষা-সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারছি। এই মহান আত্মত্যাগের কথা শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্য ২০১৭ সালে দেড় হাজার টাকায় কাঠ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনারটি তৈরি করেছিলাম। একটি স্থায়ী শহীদ মিনার হলে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ভালো হতো।’ 

শহীদ মিনার রং করার কাজে মগ্ন বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমান হোসেন, মো. আজিম শরীফ, এমরান হোসেন, ইসমাইল হোসেন, ষষ্ঠ শ্রেণির মো. শাহ আলম ও মো. ইয়াসিন আরাফাত বলে, ২০১৭ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের তিন–চার দিন আগে থেকে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী কাঠের তৈরি শহীদ মিনার রং করা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই শহীদ মিনার রং করার দায়িত্ব পালন করে। পরে কাঠের শহীদ মিনারটি বিদ্যালয়ের মাঠের এক পাশে স্থাপন করে সাজানো হয়। ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে প্রভাতফেরি শেষে সেটিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর কাঠের শহীদ মিনারটি আবার বিদ্যালয়ে যত্ন করে তুলে রাখা হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম বদিউজ্জামান আরও বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ের ৭৩১ জন শিক্ষার্থী এ কাঠের শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। ২১ ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী এটি ধুয়ে মুছে রং করে। কাজটি শিক্ষার্থী উৎসাহ নিয়েই করে। কিন্তু একটি স্থায়ী শহীদ মিনার খুব প্রয়োজন এই বিদ্যালয়ে। তাহলে নানা রাষ্ট্রীয় দিবসে শহীদদের সম্মান জানানোর সুযোগ মিলত।