মামলা দিতে পারছেন না সার্জেন্টরা

নতুন সড়ক আইন হওয়ার পরও এখনো শৃঙ্খলা ফিরছে না। সড়কের মধ্যেই যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন বাসচালকেরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ১ এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
নতুন সড়ক আইন হওয়ার পরও এখনো শৃঙ্খলা ফিরছে না। সড়কের মধ্যেই যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন বাসচালকেরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ১ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর ঘোষণার পর সাড়ে তিন মাস পেরিয়েছে। কিন্তু ট্রাফিক সার্জেন্টরা এখনো সরাসরি এই আইনে মামলা দিতে পারছেন না। যে যন্ত্রের মাধ্যমে (পজ মেশিন) পুলিশ মামলা দেয়, সেটির সফটওয়্যার এখনো হালনাগাদ করা হয়নি। কাগজের স্লিপের মাধ্যমে মামলা দেওয়ার বইও সার্জেন্টদের দেওয়া হয়নি।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হচ্ছে, তবে তা খুব সীমিত পরিসরে। মামলার কাগজের স্লিপ একেকটি জোনের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পরিদর্শকদের (টিআই) কাছে দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য সার্জেন্টরা কোনো মামলা দিতে চাইলে টিআইয়ের মাধ্যমে মামলা দিতে হয়।

গতকাল বুধবার রাজধানীর চারটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সার্জেন্ট ও কনস্টেবলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সার্জেন্টদের কাছে মামলা দেওয়ার কোনো যন্ত্র বা বই নেই। ফলে উল্টো পথে আসা, মোটরসাইকেলের চালক বা যাত্রীর হেলমেট না থাকা, সিগন্যাল অমান্য করার মতো অধিকাংশ অপরাধে সার্জেন্টরা মামলা দিতে পারছেন না।

তিনজন ট্রাফিক সার্জেন্ট প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সার্জেন্টরা নিরুপায় হয়ে মোটরসাইকেল বা গাড়িগুলো ছেড়ে দিচ্ছেন। গুরুতর ট্রাফিক আইন অমান্যের ক্ষেত্রে সার্জেন্টরা মামলা দিতে চাইলে টিআইকে ফোন দিয়ে অপরাধস্থলে আনাতে হচ্ছে। আর কিছু ক্ষেত্রে সার্জেন্টরা গাড়ি বা মোটরসাইকেল রেকারে দিচ্ছেন।

গতকাল বেলা তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কলেজ গেট মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যরা শুধু যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন। মোটরসাইকেলের হেলমেট ছাড়া আরোহী, উল্টো দিক থেকে আসা যানবাহন থামাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সার্জেন্ট বলেন, ‘হাতে মামলা দেওয়ার স্লিপ বা বই নেই। চার মাস ধরে এমন পরিস্থিতি চলছে। চোখের সামনে অনেকে আইন অমান্য করে চলে যাচ্ছে। দেখেও না দেখার মতো ছেড়ে দিচ্ছি। আর খুব গুরুতর অপরাধ হলে ট্রাফিক পরিদর্শককে ফোন দিয়ে আসতে বলতে হচ্ছে।’

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হয়। এক বছরের বেশি সময় পর গত বছরের ১ নভেম্বর আইনটি কার্যকর করার ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু সচেতনতার কথা বলে আইনের প্রয়োগ দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়। আইন কার্যকর ঘোষণার পরই গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে পরিবহনশ্রমিকেরা জেলায় জেলায় ধর্মঘট শুরু করেন। সপ্তাহখানেক পরিবহন খাতে অচলাবস্থা চলার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আইনের কিছু ধারা সংশোধনের আশ্বাসে ২৩ নভেম্বর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন শ্রমিকেরা। যানবাহনের ফিটনেস নবায়ন ও লাইসেন্স হালনাগাদ করার জন্য আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে পরিবহনশ্রমিকদের। এই সময় পর্যন্ত লাইসেন্স ও ফিটনেসের বিষয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।

>সার্জেন্টদের কাছে মামলা দেওয়ার কোনো যন্ত্র বা বই নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইন অমান্যকারী মোটরসাইকেল বা গাড়িগুলো ছেড়ে দিচ্ছেন সার্জেন্টরা।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের কঠোর শাস্তির ধারাগুলো প্রয়োগ না করার নির্দেশনা আছে। আইনে বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ জরিমানার পরিমাণ বলা হয়েছে, বিধিমালা না হওয়ায় সর্বনিম্ন কত জরিমানা করা হবে, সেটির উল্লেখ নেই। আইন পুরোপুরি কার্যকর হওয়াটি সরকারের উচ্চ মহলের ব্যাপার। কবে নাগাদ এই আইনে ট্রাফিক সার্জেন্টরা মামলা দিতে পারবেন, সেটি নিশ্চিত নয়।

তবে ট্রাফিক পরিদর্শকদের উপস্থিতিতে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। ডিএমপি নিউজ পোর্টালের আর্কাইভ ঘেঁটে দেখা যায়, সর্বশেষ ৩১ অক্টোবরে ট্রাফিক আইন অমান্যের মামলা ও জরিমানার তথ্য রয়েছে। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত ট্রাফিক আইন অমান্যের মামলার পরিসংখ্যান দেওয়া হয়নি। নতুন সড়ক আইনে মামলার পরিমাণ ও জরিমানা আদায় কম হওয়ায় এই তথ্য আর ডিএমপি নিউজে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) বাসুদেব বণিক প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হচ্ছে না, এটি ঠিক নয়। আইনের প্রয়োগ হচ্ছে, তবে সীমিত পরিসরে। মামলার বই এখনো ট্রাফিক সার্জেন্টদের কাছে দেওয়া হয়নি। আপাতত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।