ওয়াহেদ ম্যানশন সংস্কারের মত দিয়েছে টাস্কফোর্স

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ওয়াহেদ ম্যানশন সংস্কারে পক্ষে মত দিয়েছে সরকারের বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স। পলেস্তারা ও কিছু খুঁটি সংস্কার করলেই সেখানে বাস করা যাবে। এ জন্য টাস্কফোর্স একটি নকশা তৈরি করে দিয়েছে।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে এই ভবনের রাসায়নিক গুদাম থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত ভবনটি ভাঙা বা সংস্কার করা হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার এই অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলো।

১৯৯৪ সালের দিকে চুড়িহাট্টা মোড়ে ১০ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠেছিল ওয়াহেদ ম্যানশন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে নান্দনিক স্থাপনাটির দেয়াল ছিল গোলাপি রঙের। সহজেই ভবনটি সবার নজর কাড়ত। অগ্নিকাণ্ডের পর এই ভবনটি সবার কাছে আতঙ্ক। আগুনে পুড়ে ধোঁয়ায় দেয়ালগুলো কালো গেছে। অনেক দেয়াল ধসে গেছে, জানালা, দরজা খসে গেছে। ফলে প্রথম দেখায় ওয়াহেদ ম্যানশন ভুতুড়ে বাড়ি বলে মনে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, অগ্নিকাণ্ডের পর করণীয় নির্ধারণে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে তারা একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছিল। পরে এই ভবনটি বসবাস উপযোগী কি না, তা পরীক্ষার জন্য টাস্কফোর্স বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারীকে দায়িত্ব দেয়। তিনি আট দিনের মাথায় প্রতিবেদন জমা দেন। এ প্রতিবেদনে তিনি ওয়াহেদ ম্যানশনের কিছু খুঁটি সংস্কার ও নতুন করে পলেস্তারা ব্যবহার করা যাবে বলে মত দিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টাস্কফোর্সের এক সদস্য বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশন নির্মাণের সময় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মানা হয়নি। তাই বুয়েটের এ প্রতিবেদন পাওয়ার পরও ভবনটি সংস্কারের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করতে গিয়ে এক বছর সময় লেগে গেছে। সর্বশেষ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবনটি সংস্কারে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। তাঁদের পরামর্শে টাস্কফোর্সের অন্যরা সম্মতি জানিয়েছেন।

নন্দ কুমার দত্ত রোডের সিরাজুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে ওয়াহেদ ম্যানশন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মাস ছয়েক আগে নিচতলার দোকানগুলো সংস্কারের উদ্যোগ দিয়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। দ্বিতীয় তলায় ধসে যাওয়া দেয়াল নতুন করে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাড়ির মালিকের স্বজনেরা। খবর পেয়ে সংস্কারকাজ বন্ধ করে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। 

শেখ আজগর লেনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, চুড়িহাট্টা মোড়ে গেলেই সেই ভয়ংকর রাতের কথা মনে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় বিবর্ণ ম্যানশনের দিকে তাকালে মন আঁতকে ওঠে। সহজে কেউ বাড়িটির দিকে তাকাতে চান না।

ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য মুনসী মো. আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুয়েটের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে অনেকবার বৈঠক করেছি। মাসখানেক আগে রাজউকের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটি সংস্কার করতে বাড়ির মালিকদের বুঝিয়েছি। তাঁরা সেভাবেই সংস্কারকাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন সংস্কারকাজ শুরু হয়নি, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’