একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে একুশে পদক-২০১৪ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : ফোকাস বাংলা
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে একুশে পদক-২০১৪ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : ফোকাস বাংলা

১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে একুশে পদক তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদক তুলে দিয়েছেন। খবর বাসস ও ইউএনবির।

নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সম্মানিত ১৫ ব্যক্তিকে এবার একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এবার যাঁরা একুশে পদক পেয়েছেন তাঁরা হলেন—ভাষা আন্দোলনে বদরুল আলম (মরণোত্তর) ও শামসুল হুদা; শিল্পকলায় এস এম সোলায়মান (মরণোত্তর), সমরজিত্ রায় চৌধুরী, রামকানাই দাশ ও কেরামত মওলা; সাংবাদিকতায় গোলাম সারওয়ার; গবেষণায় এনামুল হক; শিক্ষায় অনুপম সেন; ভাষা ও সাহিত্যে আবদুশ শাকুর (মরণোত্তর), জামিল চৌধুরী, বেলাল চৌধুরী, রশীদ হায়দার ও বিপ্রদাশ বড়ুয়া এবং সমাজসেবায় অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।

পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেকে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি সোনার মেডেল, একটি সাম্মাননাপত্র ও এক লাখ টাকা পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবছর বিশিষ্ট নাগরিকদের একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

একুশের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার শত্রুদের মোকাবিলায় নতুন প্রজন্মের মধ্যে একুশের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘একুশের চেতনা ও স্বাধীনতার চার মূল স্তম্ভকে যারা অস্বীকার করে, তারা একুশের শত্রু, স্বাধীনতার শত্রু। এদের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে একুশের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে।’

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য এবং সম্মাননাপত্র পাঠ করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিত বিশ্বাস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চিন্তাচেতনা এবং যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, সেই চেতনাকে সমুন্নত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে আমাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। নিরপরাধ মানুষের হাত-পা, রগ কেটে নানা ধরনের জঙ্গিবাদী কাজ করা হচ্ছে। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। বাড়িঘর ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোটেও কাম্য নয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলা ভাষা বাঙালি জাতির মতোই উদার। ফারসি, আরবি, সংস্কৃত, পালি দেশজ সব ভাষাই বাংলায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৮ সাল থেকেই ভাষা-আন্দোলন শুরু হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রভাষার গুরুত্ব প্রচার করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে গ্রেপ্তার হন। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। জুলাই মাসে তিনি মুক্তি পান। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন এবং সেখান থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। ইতিমধ্যে আদি নকশা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সম্প্রসারণ এবং বাংলা একাডেমি থেকে শিল্পকলা একাডেমী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বাংলা ভাষা-বর্ণমালা-সাহিত্য নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা-সাহিত্য গবেষণায় এগিয়ে আসার জন্য লেখক-গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা একুশে পদকপ্রাপ্তদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘একুশ বাঙালি জাতির চেতনা ও গৌরবের উত্স। একুশ আমাদের অহংকার, আমাদের হার না-মানা অবিনাশী চেতনার নাম, আমাদের সামগ্রিক পরিচয়। তাই একুশে পদকপ্রাপ্তি অত্যন্ত সম্মান ও গর্বের বিষয়।’

প্রধানমন্ত্রী ভাষাসৈনিক সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে তিনি কারাগার থেকে ভাষা আন্দোলনের জন্য নিবেদিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাও স্মরণ করেন।