ধর্ষণের অভিযোগে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসলেন তাঁরা

তাঁরা দুজন একই পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। এই সুবাদে কামরুল হাসানকে ভালো লেগে যায় শাহনাজ আক্তারের। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে চাকরি ছেড়ে দেন কামরুল। এরপরও পিছু ছাড়েননি শাহনাজ। সজীব দাশ নামের আরেক সহকর্মীকে নিয়ে সাজান ধর্ষণের ঘটনা। মামলা করেন থানায়। কয়েক দিনের তদন্তে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানা-পুলিশ আসল রহস্য উদ্‌ঘাটন করে। পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন শাহনাজ ও সজীব।

পুলিশ জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি থানায় ওই তরুণী কামরুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ওই দিন নগরের স্টেশন এলাকায় একটি হোটেলে বিয়ের প্রলোভনে কামরুল তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। পাশাপাশি শাহনাজ পুলিশে দেখান, কামরুল নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে তাঁকে হোটেলে আসতে বলে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মেসেজ চালাচালিও হয়েছে। তবে ওই মেসেজ দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। মামলা নিয়ে পুলিশ ওই পোশাককর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠায়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে আসামি কামরুলের মুঠোফোনের অবস্থান দেখা হয়। ঘটনার অনেক দিন আগ থেকে তিনি চট্টগ্রাম শহরে ছিলেন না। ঘটনার দিনও তাঁর অবস্থান সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাওয়া যায়নি। পরে যে হোটেলে ধর্ষণ করা হয়েছে বলা হয়, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়। তাতে দেখা যায়, ওই পোশাককর্মী সঙ্গে এসেছেন অন্য ছেলে। কামরুলের সঙ্গে চেহারার মিল নেই। একপর্যায়ে মামলার বাদী শাহনাজ স্বীকার করেন, সহকর্মী কামরুলকে ফাঁসাতে তিনি আরেক সহকর্মী সজীব দাশকে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা সাজান। মেসেজ চালাচালির বিষয়টি দেখানোর জন্য কামরুলের নামে ফেসবুক আইডি খোলেন।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, পরে নগরের ইপিজেড এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত সজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি স্বীকার করেন, সহকর্মী শাহনাজের পরিকল্পনামতো তাঁরা হোটেলে যান। সেখান থেকে তিনি বাসায় চলে যান। শাহনাজ মামলা করতে থানায় যান। জবানবন্দিতে শাহনাজ দাবি করেন, তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রতিশোধ নিতে তিনি কামরুলের বিরুদ্ধে এ ঘটনা সাজান। মামলা করলে কামরুল ভিতু হয়ে তাঁকে বিয়ে করবেন বলে তাঁর ধারণা ছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মো. ইমরান বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। বাদী মিথ্যা মামলা করায় আদালতের নির্দেশমতো তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শাহনাজ ও সজীব মিথ্যা ধর্ষণের মামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।