খাদ্য-পুষ্টির লক্ষ্য অর্জনে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ

‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি): খাদ্য ও পুষ্টি প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক গোলটেবিলে বক্তারা। ছবি: প্রথম আলো
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি): খাদ্য ও পুষ্টি প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক গোলটেবিলে বক্তারা। ছবি: প্রথম আলো

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। অপুষ্টির হার কমানো এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না। সীমিত সম্পদ নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব বক্তব্য উঠে আসে। ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি): খাদ্য ও পুষ্টি প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক বৈঠকটির আয়োজন করে প্রথম আলো। আয়োজনে সহযোগিতা করে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)।

বৈঠকের প্রধান অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতিকে আগামী ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গেইনের নির্বাহী পরিচালক লরেন্স হাদ্দাদ। তাতে বলা হয়, বিশ্বে প্রতি তিনজনের একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। অপুষ্টির ফলে ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারউয়ে বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রমে শ্রমজীবী সংগঠন, মালিকপক্ষ, বেসরকারি খাতকে আরও বেশি যুক্ত করতে হবে।

সরকার দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ। তিনি বলেন, দারিদ্র্য ও অপুষ্টির মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ আগের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য ব্যবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অনেক চ্যালেঞ্জ। সীমিত সম্পদ নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই মূল কাজ।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিধারণ ও মূল্যায়ন ইউনিটের মহাপরিচালক বদরুল আরেফিন বলেন, শিশুদের মধ্যে পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে পাঠ্যপুস্তকের মলাটের ভেতরে এই সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক শাহ নেওয়াজ বলেন, পুষ্টি কার্যক্রমের সঙ্গে ২২টি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে ৪টি মন্ত্রণালয় ২০টির মতো প্রকল্প চালাচ্ছে। অর্থ ব্যয় হচ্ছে কিন্তু সেটি কী সঠিক পদ্ধতিতে, সঠিক ব্যক্তিদের জন্য ব্যয় হচ্ছে কী না সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুস সাত্তার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় অপুষ্টিজনিত সমস্যা বেশি। এসব এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দারা জুমচাষে অভ্যস্ত, তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য।
পুষ্টি বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের লাইন ডিরেক্টর এম এম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রিচার্ড রেগান বলেন, বাংলাদেশ সরকার পুষ্টি সংবেদনশীল প্রকল্প নিচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দুপুরে পুষ্টিকর খাবার দিতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
খাদ্য নিরাপত্তাকে বাংলাদেশের জন্য উঠতি হুমকি বলে মনে করেন বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রবার্ট সিম্পসন। তিনি বলেন, পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অর্থায়ন বড় ইস্যু।

শহর ও গ্রামে পুষ্টিবিষয়ক কর্মসূচিতে পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইফেতখার রশিদ। তিনি বলেন, শহরের বস্তির ৪০ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। গ্রামের শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে যেভাবে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, শহরের নিম্নআয়ের শিশুদের জন্য তেমন কোনো কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে না।

বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দলপ্রধান ফার্নহলজ মানফ্রেড, ইউনিসেফের পুষ্টি বিভাগের প্রধান পিয়ালি মুস্তাফি, অ্যালাইভ অ্যান্ড থ্রাইভের কান্ট্রি ম্যানেজার জেবা মাহমুদ, এমএসই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক খালেদুজ্জামান, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদিন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডির কৃষি কর্মকর্তা রয় ফেন, এফএও’র জেষ্ঠ্য পুষ্টিবিদ ললিতা ভট্টাচার্য, ইউরোপিয় ইউনিয়নের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার আসুন্তা টেস্তা প্রমুখ। প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরীর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে বৈঠকটি শেষ হয়।