রাসায়নিকের গুদাম সরানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কেন মানা হচ্ছে না, প্রশ্ন ৮ বেসরকারি সংস্থার

চকবাজারের ওয়াহেদ ম্যানশনের বেসমেন্টে মজুত রাখা রাসায়নিকের কনটেইনার ও প্যাকেট। প্রথম আলো ফাইল ছবি
চকবাজারের ওয়াহেদ ম্যানশনের বেসমেন্টে মজুত রাখা রাসায়নিকের কনটেইনার ও প্যাকেট। প্রথম আলো ফাইল ছবি

পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কেন মানা হচ্ছে না তা জানতে চেয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় আটটি বেসরকারি সংস্থা। বৃহস্পতিবার চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের এক বছর স্মরণে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাগুলো এই প্রশ্ন তোলে।

সংস্থাগুলো হলো ব্র্যাক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি), নিজেরা করি ও বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট।

সংবাদ সম্মেলনের আহ্বায়ক ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে কেন নির্দেশ দিতে হচ্ছে? তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। তিনি নির্দেশ দেওয়ার পরও সেগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? ’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তারা আদালতের নির্দেশ মানছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করছে। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বও পালন করছে না।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরছে না। কারণ সেখানে যোগসাজশে অনিয়ম, দুর্নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে গেছে। সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে। তিনি বলার পরও রাসায়নিকের গুদাম সরেনি। গুদাম না সরিয়ে যদি সুবিধা পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরানোর উদ্যোগ নেবে কেন।’

সভায় চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৩০ কোটি টাকা অনুদানের হদিসও জানতে চান আলোচকেরা। এএলআরডি এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রশ্ন তোলেন, ‘অনুদান ক্ষতিগ্রস্তদের হক। সেটা কেন পড়ে থাকল।’ তিনি সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কী করা হয়েছে তাও জানতে চান। নিজেরা করি–এর খুশি কবির নীতিমালায় যা আছে তার ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর বেসরকারি পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামগুলো কেন সরিয়ে ফেলা হবে না জানতে সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। গত নয় বছরেও সরকার আদালতে কোনো জবাব দাখিল করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে স্বজন ও সম্পদ হারিয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন মো. নাসিরউদ্দীন। একমাত্র ছেলে ওয়াসিকে হারিয়েছেন অগ্নিকাণ্ডে। তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার মানুষ জেনে শুনে বিষ পান করে বসে আছে। নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম ভাড়া দিচ্ছে এখনও। সরকারের উচিত রাসায়নিকের ব্যবসা যাঁরা করছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে এগুলো স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা।’

এক প্রশ্নের জবাবে নাসিরউদ্দীন বলেন, ‘চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর কোনো দিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ এসে গুদামগুলো স্থানান্তরের ব্যাপারে কথা বলতে আসেনি।’

ওই আগুনে মো. আশিক উদ্দীনের দোকান পুড়ে গিয়েছিল। পুঁজির অভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। স্থানীয় তরুণদের নিয়ে রাসায়নিকের গুদাম সরানোর চেষ্টা করছেন। বাধার মুখে পড়ছেন, গুম হয়ে যেতে পারেন এই আশঙ্কাও করলেন তিনি।

আরও পড়ুন: