শহীদ মিনারটি মাটির নিচেই থাকবে?

এই নকশা অনুযায়ী ১৬ মাস আগে শুরু হয়েছে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ।  প্রথম আলো
এই নকশা অনুযায়ী ১৬ মাস আগে শুরু হয়েছে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ। প্রথম আলো

রাজশাহীর ভাষাসৈনিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ মাস আগে ‘দেশের প্রথম শহীদ মিনার’-এর জায়গাটিতে নতুন করে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ও রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা ওই নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এ জন্য ৫০ লাখ টাকাও বরাদ্দ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই শহীদ মিনারের যেটুকু কাজ হয়েছে, তা মাটির নিচেই। এক বছরে কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।

দেশের প্রথম শহীদ মিনারটি স্থাপিত হয়েছিল রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাস চত্বরে। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় এখনো রাজশাহীতে যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি, দেশের প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে এটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর নতুন করে সেই শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরও আগে ২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান প্রথম শহীদ মিনারের স্মৃতি রক্ষার জন্য একটি ‘শ্রদ্ধাস্মারক’ ফলক স্থাপন করেছিলেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গত জুনে কাজ শেষ করার কথা ছিল। জায়গার সংকটের কারণে স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। নকশাও পাল্টাতে হয়েছে। তাই দেরি হচ্ছে।

রাজশাহীর ভাষাসৈনিকদের দাবি, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে—এমন একটি খবর রাজশাহীতে আসে সন্ধ্যায়। রাজশাহীর মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের টেলিফোনে খবরটি আসার পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের বুকে গুলি চালানোর খবরে সোচ্চার হয়ে ওঠে রাজশাহীর ছাত্র-জনতা। ওই রাতেই রাজশাহী কলেজের এ ব্লকের আবাসিক শিক্ষার্থী গোলাম আরিফ টিপুর কক্ষে সভা হয়। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয় শহীদদের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের।

কিন্তু তখনকার দিনে শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না কারও। এরপরও রাত সাড়ে নয়টায় শুরু হলো নির্মাণকাজ। পাশেই ছিল হোস্টেল নির্মাণের জন্য ইট-কাঠ। সেই ইট-কাঠের সঙ্গে কাদামাটি মিশিয়ে রাত ১২টার মধ্যে নির্মিত হয় দেশের প্রথম শহীদ মিনার। তখন মাটিতে কালি দিয়ে দিয়ে লিখে দেওয়া হয়েছিল ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। এভাবেই রচিত হয়েছিল মহান ভাষাশহীদদের সম্মানে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস। কিন্তু পরদিনই ২২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পুলিশ শহীদ মিনারটি ভেঙে দেয়।

নির্মাণকাজে বিলম্বের বিষয়ে বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অনেক উন্নয়নকাজ হচ্ছে। মিস্ত্রি এক দিন কাজ করে তো ১০ দিন আর কোনো খবর নেই। আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে শহীদ মিনারের কাজটি শেষ করতে পারলেও ভালো লাগত। কিন্তু সে সম্ভাবনাও নেই।’