খালে দখলদার ৭৮৮ জন

ঝিনাইদহের খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর। সম্প্রতি হরিণাকুণ্ডুর সাতব্রিজ এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ঝিনাইদহের খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর। সম্প্রতি হরিণাকুণ্ডুর সাতব্রিজ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালের জায়গা দখল করে দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও পাড় কেটে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এমনকি বড় বড় ভবনও গড়ে তোলা হয়েছে এই খালের জায়গায়। অনেক স্থানে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে একসময় খাল ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮১৫ কিলোমিটার খালে অন্তত ৭৮৮ জন দখলদার শনাক্ত করা হয়েছে। উচ্ছেদের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, যা খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪টি জেলার ১৫টি উপজেলায় চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জিকে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার উপজেলাগুলোয় খাল খনন করা হয়। প্রথম কাজ শুরু হয় ১৯৫৫-৫৬ অর্থবছরে। ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি সেচব্যবস্থার আওতায় আনা হয়। ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ডু ও শৈলকুপায় ৮১৫ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়। বর্তমানে জেলার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ কার্যক্রম চলছে।

নব্বইয়ের দশকের পর এই খালের গুরুত্ব কমতে থাকে। অনেক স্থানে তখন ঠিকমতো পানির প্রবাহ ছিল না। আবার খালটি সংস্কার না করায় ভরাট হয়ে গিয়েছিল। পানিপ্রবাহ বন্ধ দেখে খালের জমি দখল শুরু হয়। 

পাউবোর ঝিনাইদহ কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরিণাকুণ্ডু ও শৈলকুপায় ৭৮৮ জন দখলদারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শৈলকুপায় ৬০৬ জন ও হরিণাকুণ্ডুতে ১৮২ জন দখলদার রয়েছেন। সদর উপজেলায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। দখলদারেরা খালের জমিতে বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। অনেকে খাল কেটে জমি সমতল বানিয়ে চাষাবাদ করছেন।

>ঝিনাইদহে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালের জায়গা দখল করে দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও পাড় কেটে চাষাবাদ করা হচ্ছে।

হরিণাকুণ্ডুর রামচন্দ্রপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা খালের ওপর বাড়ি নির্মাণ করেছেন। স্থানটি দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এখানে একসময় খাল ছিল। বাড়ির এক নারী সদস্য স্বীকার করেন, এই স্থানে খাল ছিল। তবে এখন খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাঁরা বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। একই উপজেলার সাতব্রিজ নামক স্থানে খালের ওপর দোকান করেছেন রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, দোকানটি বেশ কয়েক দফা বেচাকেনা হয়েছে। সবশেষ তিনি এই দোকান নিয়ে ব্যবসা করছেন। বরিশখালী গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, খাল এখন আর কোনো কাজে আসে না। যে কারণে তাঁর মতো অনেকে দখল করেছেন। 

 শৈলকুপায় খাল দখল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন এলাকায় ২৬৫ জন দখলদার রয়েছেন। এ ছাড়া সারুটিয়া ইউনিয়ন এলাকায় ১৭৮ জন, হাকিমপুরে ৯৬ জন ও পৌরসভা এলাকায় রয়েছেন ৬৭ জন দখলদার। তাঁরা খাল দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলতে মাটি দিয়ে ভরাটও করেছেন।

ঝিনাইদহ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী খুরশিদ শরিফ জানান, জিকে সেচ প্রকল্পটি আগের মতো কার্যকর না থাকলেও চালু রয়েছে। বর্তমানে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। বছরে একরপ্রতি ৫০০ টাকায় পানি পাচ্ছেন কৃষকেরা। যেখানে প্রকল্পটি চালু রয়েছে, সেখানকার কৃষকেরা ঠিকমতো সেচ বিল দেন না। আবার খালগুলো ভালো না থাকায় পানির অপচয় হয়ে থাকে।  লাইনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করলে কৃষক ঠিকমতো পানি পাবেন। সেচ প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখতে হলে খালের দখলদার উচ্ছেদ জরুরি।

ঝিনাইদহ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। দ্রুতই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।