দেখাদেখির সঙ্গে চলছে কেনাকাটা

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বইগুলো দেখে সেদিকে এগিয়ে যায় ইথা। মনিপুরি উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে সে। ঝিনুক প্রকাশনীতে সাজানো বইগুলো থেকে একটা বেছে নেয়, তারপর বড় বোন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ইশাকে বলে, ‘আপু, এইটা আমি কিনব।’

‘তুমি শরৎচন্দ্রের বই কিনছ? এ সময়ের লেখকদের চেয়ে শরৎচন্দ্র কেন তোমাকে বেশি টানে?’ ‘স্কুলের পাঠ্যবইয়ে পড়েছি শরৎচন্দ্র। তাই তাঁর বই আরও বেশি পড়তে চাই।’ বলার সময় ঝলমল করতে থাকে ইথার মুখ।

কাছেই সন্দেশের স্টল। সাদমান সাকিব জানালেন, এখানে নতুন এসেছে কাজুও ইশিগুরোর আমি যখন অনাথ ছিলাম, আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগ্রন্থ পাখির চোখে দেখা, একদিন সবকিছু গল্প হয়ে যায়, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের আমি এখানে বক্তৃতা দিতে আসিনি। মজার ব্যাপার হলো, এখানে একটি অণুগল্পের বই দেখে রহমতউল্লাহ নামের এক তরুণ বললেন, ‘আগে মানুষ মহাকাব্য লিখত, পড়ত মানুষ। এখন লেখে অণুকাব্য। মহাকাব্য ছোট হতে হতে অণুকাব্য হয়েছে। এখন তাই কবিতা পড়ে না মানুষ।’

প্রচলন থেকে আদ্রিতা বসাক কিনেছে আবোল তাবোল আর সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ। মতিঝিল মডেল স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে ও। 

কবির স্টলে রয়েছে শ্যামল চক্রবর্তীর অ্যারিস্টোটল থেকে স্টিফেন হকিং, শামীম আহমেদের মহাভারতে যৌনতা, মোস্তাফিজ কারিগরের কেরু এন্ড কোং। 

পার্ল পাবলিকেশন্স ছোটদের জন্য মোস্তফা মামুনের দুটো বই এনেছে। রাজবাড়ির অন্ধকারে আর প্যাকেট নিয়ে পাগলামি। 

পথচলতি মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের কেনা বইয়ের নাম জানতে চাইলে দৈবচয়নের মতো সামনে এল শামস আল মমীনের অনেক রাত জেগে থাকার পর (হাওলাদার প্রকাশনী), মোজাফফর হোসেনের অতীত একটা ভিনদেশ (পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড), রেজানুর রহমানের আবাসভূমি ও মনি হায়দারের গল্প পঞ্চাশ (কথাপ্রকাশ)। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ ও আহমদ বশীরের নিরুদ্দিষ্ট অশ্বমেধ এসেছে জনান্তিক থেকে।

এ ছাড়া মেলায় প্রথমা এনেছে আকবর আলি খানের দারিদ্র্যের অর্থনীতি: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। আজ প্রথমায় আরও দুটি নতুন বই এসেছে। হাসনাত আবদুল হাইয়ের হেমিংওয়ের সঙ্গে ও মোহাম্মদ আজমের হুমায়ূন আহমেদ পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য। অন্যপ্রকাশ এনেছে সামস আহমেদের কবিতার বই মাধবী তুমি।

গতকাল অনেক মানুষ ঘুরছিল মেলায়, তাদের অনেকের হাতই খালি। সে রকমই একজন কলেজ-পড়ুয়া অরিন বলছিল, ‘আজ দেখাদেখি, কাল (আজ শুক্রবার) একুশের দিন কেনাকাটা!’