কিশোরগঞ্জে ১৪৬ মাদ্রাসার একটিতে শহীদ মিনার

স্কুলে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই। তাই আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় মরিচখালী এলাকায় রোজ ফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেনে। ছবি: তাফসিলুল আজিজ
স্কুলে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই। তাই আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় মরিচখালী এলাকায় রোজ ফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেনে। ছবি: তাফসিলুল আজিজ

সরকারি আদেশ অনুসারে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যতামূলক হলেও কিশোরগঞ্জের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তা নেই। এর মধ্যে মাদ্রাসাগুলোর অবস্থা করুণ। জেলার ১৪৬টি মাদ্রাসার মধ্যে ১৪৫টিতেই শহীদ মিনার নেই। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে বা যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে, সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায় শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দিবসটি পালনও করে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাজিতপুরের সরারচরে হাজী আ. বারী উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শহীদ মিনার নেই। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারহানা রহমান বলেন, ‘অর্থের অভাবে প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করতে পারিনি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির দিন বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয় মাতৃভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।’

ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সামিরা জাহান ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম বলে, স্কুলে শহীদ মিনার নেই। ২১ ফেব্রুয়ারির দিন ভোরে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে অন্য একটি স্কুলের শহীদ মিনারে ফুল দিই।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ২৬৩টি নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৫১টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ১১২টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। শুধু ইটনার সব স্কুলে শহীদ মিনার রয়েছে। এ উপজেলায় মোট ১৩টি স্কুল আছে। সদর উপজেলার ৩৮টি স্কুলের মধ্যে ২৩টিতে শহীদ মিনার নেই। জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলার ৩৯টি নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মধ্যে ৩০টিতেই শহীদ মিনার নেই।

অপরদিকে জেলার মোট ১৪৬টি মাদ্রাসার মধ্যে ১৪৫ টিতেই শহীদ মিনার নেই। শুধু করিমগঞ্জ উপজেলার ঝাউতলা আনোয়ারিয়া আলিম মাদ্রাসায় শহীদ মিনার রয়েছে। এ মাদ্রাসার সুপার মো. আবদুল ওয়াহাব জানান, গত অর্থবছরে এডিবির শিক্ষা খাত থেকে মাদ্রাসার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পান তাঁরা। এ টাকা তাঁরা অন্য কাজে না লাগিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এবারই প্রথম তাঁরা নতুন নির্মিত শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

করিমগঞ্জের বারঘরিয়া ফাজিলখালী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার হাবিুবর রহমান বলেন, ১৯৯৪ সালে তাঁদের মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হলেও এখন পর্যন্ত তাঁদের কোনো শহীদ মিনার নেই। সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকায় শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে তাঁরা নিজেদের অর্থায়নে কাঠ দিয়ে অস্থায়ীভাবে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার প্রসঙ্গে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. জুলফিকার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, আশা করছি, অচিরেই সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক জানান, কিশোরগঞ্জ জেলায় মোট ১ হাজার ৩২৬টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ৯৮১টিতে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ৩৪৫টি প্রাথমিক স্কুলে আগামী অর্থবছরে শহীদ মিনার স্থাপনের আশা করা যাচ্ছে।