ঝিলমিলে ফ্ল্যাটের কাজ শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা

কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের কাজ বাস্তবে কবে নাগাদ শুরু হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা ছিল। এখন বলা হচ্ছে, আগামী মাসের ১৭ তারিখের পর কাজ শুরু হতে পারে। যদিও পাইলিংসহ প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে মালয়েশীয় যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, সেসব যন্ত্রপাতি এখন পর্যন্ত আনার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি।

অন্যদিকে তিন ধরনের আয়তনের ১৪ হাজার ফ্ল্যাটের এই প্রকল্পে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহীরা রাজউক ভবনে গিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু অনুসন্ধান বিভাগ বা ঝিলমিল অ্যাপার্টমেন্টের প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে সঠিক কোনো খবর জানানো হচ্ছে না।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্র জানায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ার বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস অ্যান্ড কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে রাজউক এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি করেছিল। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে মালয়েশিয়াই বিনিয়োগ করবে। রাজউক পরে কিস্তিতে তা পরিশোধ করবে। ঝিলমিল এলাকায় ১৬০ একর জমিতে ৮৫টি ভবন নির্মাণের কথা। এর মধ্যে ৬০টি ২০ তলা এবং ২৫টি ২৫ তলার ভবন হবে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪০০, ১ হাজার ৬০০ এবং ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের তিন ধরনের ফ্ল্যাট হওয়ার কথা। আর প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ২০২৩ সালের মধ্যে।

গত সোমবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে বাস্তব কাজের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। তবে ঝিলমিল প্লট প্রকল্পের কারণে ভূমি উন্নয়নের কাজ আগেই শেষ করা আছে। জানা যায়, এখানে কিছুদিন আগে মালয়েশীয় কোম্পানি বিএনজি পাইলিংয়ে জন্য কিছু পরীক্ষামূলক কাজ করেছে। তবে তা দেশীয় প্রযুক্তিতে। কিন্তু যেহেতু মালয়েশীয় প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, তাই ওই পরীক্ষা কাজে আসবে না। আর মালয়েশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি আনা হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কথাই হচ্ছে।   

রাজউক বোর্ড সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজউকের পক্ষ থেকে চিঠিপত্র দিয়ে মালয়েশীয় কোম্পানিকে কাজ শুরু করার কথা বলা হচ্ছে। তবে মার্চে কাজ শুরু হতে পারে বলে আশা করা যায়।

অপর একজন কর্মকর্তা বেলন, আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষের কর্মসূচির পর প্রকল্পকাজের উদ্বোধন করার সম্ভাবনা আছে। আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বা উপপ্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন। 

আগ্রহীদের খোঁজখবর

পদ্মা সেতুর নির্মাণ ঘিরে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় জমির কদর বেড়েছে। কিন্তু সেখানে সরকারিভাবে নতুন প্লট প্রকল্প হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক (প্লট) প্রকল্পেও নতুন করে প্লট দেওয়া হবে না। তাই অনেকেই ঝিলমিল অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী। গতকাল বুধবার রাজউক ভবনে গিয়ে এ ধরনের কয়েকজন আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা খোঁজ নিতে চাইছেন, ফ্ল্যাটের জন্য কবে আবেদনপত্র চাওয়া হবে।

এ বিষয়ে রাজউকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বাস্তবে কাজ শুরু হলেই আবেদনপত্র আহ্বান করা হবে। তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ শুরু আগেই আবেদনপত্র আহ্বান করে রাজউক বেকায়দায় পড়েছিল। দীর্ঘদিন মানুষের টাকা আটকে থাকায় সমস্যাও হয়েছে। তাই এই প্রকল্পে আবেদন নেওয়া হবে সবদিক চিন্তা করে।

ফ্ল্যাটের দাম কত হতে পারে, তা নিয়েও মানুষের অনেক আগ্রহ । এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম কত হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, তবে উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের তুলনায় দাম অবশ্যই বেশি হবে। উত্তরায় ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম ৪ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু ঝিলমিল এলাকায় ভূমির দাম বেশি। তা ছাড়া, উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরুর সময়ের নির্মাণ ও অন্যান্য সামগ্রীর যে দাম ছিল, এখনকার বাজারদর তার তুলনায় অনেক বেশি।