একটি সেতুর জন্য ৩০ বছরের অপেক্ষা

নেতাই নদে সাঁকো দিয়ে পারাপার। সম্প্রতি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
নেতাই নদে সাঁকো দিয়ে পারাপার। সম্প্রতি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার নেতাই নদে সেতু নির্মাণের দাবি প্রায় ৩০ বছরের। দুই বছর ধরে সরকারের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদের কালিকাবাড়ি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও এখনো অগ্রগতি সামান্যই। ফলে অপেক্ষা আর শেষই হচ্ছে না আশপাশের ১৫ গ্রামের মানুষের।

ভারতের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়ার খরস্রোতা নদ নেতাই। নদের কালিকাবাড়ি এলাকা দিয়ে প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। শীতকালে তবু কোনোরকমে তারা নেতাই নদ পার হতে পারে। কারণ, কালিকাবাড়ি এলাকায় একটি বাঁশের সাঁকো আছে। তবে বর্ষাকালে ওই সাঁকো তলিয়ে যায়। তখন নদ পারাপারে নৌকা ছাড়া অন্য উপায় থাকে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কালিকাবাড়ি এলাকা দিয়ে নেতাই নদ পার হয়ে ধোবাউড়া উপজেলা সদরে যেতে হয় অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষকে। এর মধ্যে রয়েছে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি, কড়ইগড়া, রামসিংহপুর, কাশিপুর, বাগপাড়া, ঘিলাগড়া, ছোট মুন্সীপাড়া, উত্তর রানীপুর, বল্লভপুর এবং ঘোষগাঁও ইউনিয়নের নয়াপাড়া, ঘোষগাঁও, ভালুকাপাড়া। এসব গ্রামের মানুষ নিজেদের উৎপাদিত সবজি ও ধান বিক্রির জন্য ধোবাউড়ায় নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরাও উপজেলা সদরের স্কুল–কলেজে পড়াশোনা করে। তা ছাড়া চিকিৎসার জন্য এলাকায় ভালো ব্যবস্থা নেই। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে নদ পার হয়ে উপজেলা সদর ও ময়মনসিংহ শহরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, তাঁদের গ্রামে ধানসহ নানা প্রকার সবজি উৎপন্ন হয়; কিন্তু সেসব পণ্য পরিবহন করা কঠিন হওয়ায় অনেক সময় কৃষক সেগুলো শহরে নিয়ে বিক্রি করতে পারেন না। সেতু নির্মাণ হলে কৃষক শহরে সবজি বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন।

কালিকাবাড়ি এলাকায় নেতাই নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য বরাবরই দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও দপ্তরে ধরনাও দিয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন কিছু ঘটেনি। ফলে প্রতিবছর শীতকাল এলে এলাকাবাসী নিজেরা একটি বাঁশের সাঁকো বানিয়ে নেয়। এ জন্য কয়েক গ্রাম থেকে বাঁশ সংগ্রহ করা হয়। এই সাঁকো দিয়ে বর্ষাকাল আসার আগপর্যন্ত এলাকাবাসী নদ পারাপার হতে পারে; কিন্তু বর্ষার সময় নদে পানি বাড়লেই সেই সাঁকো তলিয়ে যায়। তখন নৌকাই হয়ে ওঠে মানুষের একমাত্র ভরসা।

এলজিইডির উপজেলা কার্যালয় সূত্র বলছে, দুই বছর আগে কালিকাবাড়ি এলাকায় নেতাই নদের ওপরে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়। সেখানে সেতু নির্মাণের স্থানে সরকারিভাবে মাটি পরীক্ষাসহ নানা কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে সম্ভাব্য সেতুটির প্রকল্প বেশ ব্যয়বহুল হবে। তাই বিদেশি অর্থায়নে সেটি নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। এ জন্য বর্তমানে অর্থ সংগ্রহের কাজ চলছে।

এলজিইডির ধোবাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী শাহীনুর ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে কালিকাবাড়ি এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। নেতাই নদটি খরস্রোতা হওয়ায় এখানে ব্যয়বহুল একটা সেতু নির্মাণ করতে হবে। বিদেশি অর্থায়নে এ ধরনের সেতু নির্মাণ করা হয়। ইতিমধ্যে এ–সংক্রান্ত একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়েছে। এখন অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা সফল হলেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।