বিচারকের চেষ্টায় ডাস্টবিন থেকে নারীটি হাসপাতালে

ডাস্টবিনের বাইরে পড়ে ছিলেন নারীটি। ছবি: সংগৃহীত
ডাস্টবিনের বাইরে পড়ে ছিলেন নারীটি। ছবি: সংগৃহীত

ডাস্টবিনের বাইরে পড়ে ছিলেন এক নারী। ঠোঁটে উচ্ছিষ্ট খাবারের দু-একটা দানা আটকে ছিল। চোখ, মুখ ও নাকে মাছি ভনভন করছিল। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল মারা গেছেন। এ দৃশ্যে হঠাৎ চোখ আটকে যায় এক পথচারীর। কাছে এসে দেখেন, ওই নারী তখনো শ্বাস নিচ্ছেন। পেটটা কিছুটা ওঠানামা করছে। দ্রুত তিনি পুলিশের সহযোগিতায় ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে নাটোর শহরের চকরামপুর মহল্লার পঁচুর হোটেলের সামনে ঘটনাটি ঘটে। বর্তমানে ওই নারী নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি। ওই পথচারী হলেন নাটোরের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মতিউর রহমান।

মতিউর রহমানের ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে তিনি একাই হেঁটে শহর ঘুরছিলেন। হঠাৎ পঁচুর হোটেলের পাশের ডাস্টবিনে ওই নারীকে পড়ে থাকতে দেখেন। চোখে, মুখে ও নাকে মাছি ভনভন করছিল। দূর থেকে দেখে মৃত মানুষ মনে হচ্ছিল। কাছে এসে তিনি দেখতে পান, ওই নারী তখনো শ্বাস নিচ্ছেন। পেটটা কিছুটা ওঠানামা করছে। আইনি বিষয়টি পরিষ্কার রাখতে তিনি পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অটোরিকশায় করে ওই নারীকে সদর হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় তিনি কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন।

আজ শনিবার বিকেলে নাটোর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নারী ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ওই নারী। নড়াচড়া কিছুটা স্বাভাবিকভাবে করতে পারলেও কথাবার্তা বলতে পারছেন না। তবে ইশারায় সাড়া দিচ্ছেন।

নারীটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত
নারীটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান জানান, সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা রাসেল হোসেনের তত্ত্বাবধানে ওই নারীর চিকিৎসা চলছে। অবহেলা, অযত্নে ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থা শোচনীয়। খাদ্য, চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষা পেলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

শনিবার সন্ধ্যায় কথা হয় ওই বিচারকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে ওই নারীর পাশে দাঁড়ানোটা আমার কর্তব্য ছিল। তবে পুলিশ ও নাটোরের সিভিল সার্জন ওই নারীর জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাঁদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘এই আধুনিক যুগে মানুষের এমন জীবনযাপনও চোখে পড়ে! তবে সবার চোখে পড়ে না। সবাই এসব মানুষের জন্য এগিয়ে আসেন না। অচেনা-অজানা এই নারীকে উদ্ধার করে তাঁর খাদ্য, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে একজন উত্তম মানুষের পরিচয় দিয়েছেন নাটোরের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মতিউর রহমান। মানুষ হিসেবে তাঁকে আমিও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’