নড়বড়ে সাঁকোয় জীবনের ঝুঁকি

সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার প্রতিপাল গ্রামে বুড়াইল নদের ওপর।  ছবি: প্রথম আলো
সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার প্রতিপাল গ্রামে বুড়াইল নদের ওপর। ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে বুড়াইল নদ। এই নদের ওপরে তৈরি বাঁশের সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এ কারণে উপজেলার ১০ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর প্রতিপাল গ্রামের ছফি হোসেনের ছেলে মারুফ হোসেন (৮) সাঁকোটি পার হতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে নদে ডুবে মারা যায়। সে প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। স্কুল ছুটির পর সে বাড়ি ফিরছিল। ওই দুর্ঘটনার পর সাঁকোর জায়গায় সেতু নির্মাণের দাবি উঠলেও তা আজ পর্যন্ত পূরণ করা হয়নি।

প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেরামত আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বাঁশের ভাঙা সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাওয়া–আসা করছে। মারুফের দুর্ঘটনার পর থেকে অনেক অভিভাবক ভয়ে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠান না। শিশুরা নদ পারাপারে কবে এ ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবে তা জানি না।’

স্থানীয় লোকজন বলেন, ওই স্থানে সেতু না থাকায় দুই পাশের লোকজন তিন বছর আগে চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। বর্তমানে সাঁকোটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। তবু ঝুঁকি নিয়ে ১০ গ্রামের মানুষসহ শিক্ষার্থীরা সাঁকো দিয়ে নদ পারাপার হচ্ছে।

প্রতিপাল গ্রামের নবতিপর আবদুস সোবহান বলেন, ‘দেকি, মাঝেমধ্যে নদীত খালি মাপে। মানুষে কয়, এইবার ব্রিজ হইবে। কিন্তু হইবে কোন দিন? মুই মরি যাওয়ার আগোতে নদীত ব্রিজটা দেকপার চাও।’

বুড়াইলের পূর্ব পাশে শালমারা, আদম, পাওটানা, কামারপাড়া ও পূর্ব দেবু গ্রাম। এই পাশেই প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নেকমামুদ বাজার। নদের পশ্চিম পাশে পরান, ব্রাহ্মণীকুণ্ডা, দক্ষিণপাড়া ও পশ্চিম দেবু গ্রাম। দুই পাশের মানুষকে নানা কাজে প্রতিদিনই সাঁকো পারাপার করতে হয়।

পরান গ্রামের কৃষক নুর আলম বলেন, ‘বাঁশের পুলটা (সাঁকো) ভাঙ্গি গেইচে। খালি মানুষ হাঁটি পার হওয়ায় মুশকিল। হামরা ধান, গম আবাদ করি পুলটা পার করিয়া যে হাটোত নিয়া যায়া বেচামো, তাক পারি না।’

সম্প্রতি প্রতিপাল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এটির মাঝখানে কিছু বাঁশ নেই। বইখাতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা সাঁকোটি পার হচ্ছে। যে স্থানে বাঁশ নেই, সেখানে ওপরে আরেকটি বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই বাঁশটি ধরে শিক্ষার্থীরা সাবধানে নদ পার হওয়ার চেষ্টা করছে।

এ সময় শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন (১০) বলে, ‘বাঁশের পুলটাত চড়লে পড়ি যাওয়ার খুব ভয় নাগে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন জমির রবু সরদার বলেন, নদের ওই স্থানে অনেক আগেই সেতু নির্মাণ করা উচিত ছিল। সেতুর অভাবে স্কুলের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নদের ওই স্থানে সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, তাড়াতাড়ি অনুমোদন পেয়ে যাব। তখন সেতু নির্মাণ করা হলে গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের নদ পারাপারে বড় কষ্ট লাঘব হবে।’