জমি বিক্রির টাকা জমা হলো অন্যের হিসাবে

টাকা। প্রতীকী ছবি
টাকা। প্রতীকী ছবি

মিল্কভিটা চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রকল্পের জন্য ১০ গন্ডা বা ২০ শতক জমি বিক্রি করেছিলেন স্থানীয় ব্যক্তি মো. আবদুন নুর। জমি বিক্রির ৫৭ লাখ ৪১ হাজার টাকার পে–অর্ডার তাঁর পরিবর্তে জমা হয় মো. আবদুল নুর নামে আরেক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে। ওই টাকা একই দিন স্থানান্তর হয় মিল্কভিটার স্থানীয় পরিচালকের স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের নামে।

জমি রেজিস্ট্রির পর টাকা চাওয়ায় মো. আবদুন নুরকে উল্টো পুলিশের ভয় দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জমি বিক্রেতা টাকা না পাওয়ায় মিল্কভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব অমর চান বণিক, পরিচালক নাজিম উদ্দীন হায়দার, মো. আবদুল নুর (তাঁর হিসাবে পে–অর্ডার জমা হয়) ও মেসার্স হুমায়ারা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী (পরিচালক নাজিম উদ্দীন হায়দারের স্ত্রী) কাছে ১২ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী মনতোষ বড়ুয়ার মাধ্যমে আইনি নোটিশ পাঠান।

আইনজীবী মনতোষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুন নুর মিল্কভিটার কাছে ১০ গন্ডা জমি বিক্রি করেন। জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার মুহূর্তে তাঁর টাকা বা পে–অর্ডার পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু গত বছরের ১৪ জুলাই জমি রেজিস্ট্রি নিয়ে আসল মালিক আবদুন নুরকে মিল্কভিটার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পে–অর্ডার দেয়নি।

মনতোষ বড়ুয়া আরও জানান, মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ ঢাকার সোনালী ব্যাংক তেজগাঁও শাখা থেকে জমি বিক্রেতা মো. আবদুন নুরের নামে ৫৭ লাখ ৪১ হাজার টাকার একটি পে–অর্ডার (নম্বর সিডি ১০০২০৭২৮৯৭) তৈরি করে। পে–অর্ডারটি চট্টগ্রামের মইজ্জারটেক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক শাখায় আরেক মো. আবদুল নুরের নামে জমা হয়। ওই টাকা একই দিন মিল্কভিটার পরিচালক নাজিম উদ্দীনের স্ত্রীর মালিকাধীন মেসার্স হুমায়ারা ডেইরি ফার্মের হিসাবে স্থানান্তর হয়। আসল ব্যক্তিকে পে–অর্ডার না দিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির হিসাবে জমা দিয়ে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছে। এ জন্য দায়ী মিল্কভিটার স্থানীয় পরিচালক নাজিম উদ্দীন হায়দার।

জালিয়াতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমর চান বণিক বলেন, ‘আমি এখনো আইনি নোটিশ হাতে পাইনি। তবে অভিযোগ সম্পর্কে আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি।

মিল্কভিটার স্থানীয় পরিচালক ও অভিযুক্ত নাজিম উদ্দীন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুন নুরের কাছ থেকে আমি টাকা পাই। ওই টাকা সমন্বয় হয়ে গেছে। জমির মালিককে আপনার সামনে হাজির করব।’

জমি বিক্রেতার ব্যাংক হিসাবে পে–অর্ডার জমা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাজিম উদ্দীন বলেন, মো. আবদুন নুরের ব্যাংক হিসাব ছিল না। এ জন্য আরেক আবদুল নুরের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেওয়া হয়।’ একজনের পে–অর্ডার অন্য ব্যক্তির নামে জমা হয় কীভাবে—এই প্রশ্নের জবাবে নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’

এদিকে তৃতীয় ব্যক্তি আবদুল নুরের মাইজ্জারটেক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক হিসাবে পে–অর্ডারটি জমা হয়। তিনিও কিছু জানতেন না।

মো. আবদুল নুর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হলে মোবাইল ফোনে একটি ম্যাসেজ (ক্ষুদে বার্তা) পাই। এরপরই মিল্কভিটার পরিচালক নাজিম উদ্দীন হায়দার আমাকে কল দিয়ে ব্যাংকে যেতে বলেন। ব্যাংকে গেলে একই দিন আমার হিসাবে জমা হওয়া ৫৭ লাখ টাকা ৪১ হাজার টাকা নাজিম উদ্দীন হায়দার তাঁর স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করতে বাধ্য করেন।’

জমি বিক্রেতা মো. আবদুন নুর বলেন, ‘আমার কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি নেওয়ার পর পে–অর্ডার দিতে গড়িমসি করেন নাজিম উদ্দীন হায়দার। কয়েক দিন ঘোরানোর পর তিনি আমাকে পুলিশের ভয় দেখানো শুরু করেন। আমাকে অসংখ্য মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। এরপর আমি আইনি পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নই।’

আইনজীবী মনতোষ বড়ুয়া বলেন, বিক্রেতা টাকা না পেলে জমির রেজিস্ট্রি বাতিল হয়ে যাবে। এ জন্য জমি বিক্রেতাকে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।